তের মাস পর মূল্যস্ফীতি এক অংকের ঘরে নামল। এপ্রিল মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি) মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে মূল্যস্ফীতির এ হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরে।
বিবিএস-এর তথ্যে বলা হয়, এর আগে গত বছরের (২০১১ সাল) মার্চে মূল্যস্ফীতি দুই অংকে গিয়ে দাঁড়ায়। আর চলতি বছরের মার্চ মাসে এর হার ছিলো ১০ দশমিক ১০ শতাংশ। এদিকে শহর ও গ্রাম উভয় পর্যায়েই মূল্যস্ফীতি কমেছে। অপরদিকে বেড়েছে মানুষের মজুরি ও আয়। তবে গত এক বছরের গড় মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. শাহজাহাল আলী মোল্লা বিবিএস মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “বিবিএস এর জাতীয় হিসাব শাখার হিসাবে, ১৯৯৫-৯৬কে ভিত্তি বছর ধরে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে মূল্যস্ফীতির হার জাতীয় পর্যায়ে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে হয়েছে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। যা গত মার্চ মাসে ছিলো ১০ দশমিক ১০ শতাংশ।“
এদিকে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান তাৎক্ষণিকভাবে বলেন, “দীর্ঘদিন পর মূল্যস্ফীতি এক অংকে নামল। এটি আমাদের বড় অর্জন। এবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করে আমি আশা করে ছিলাম মূল্যস্ফীতি এক অংকে নেমে আসবে। এবং সেভাবেই মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হয়। আজকের এই তথ্য থেকে মুদ্রানীতি কাজ করেছে এবং অর্থনীতির মূল সূচক সাধারণ মানুষের সাথে সরাসরি জড়িত তা প্রমাণিত হয়েছে।“
তিনি আরো বলেন, “আমি আশাবাদী, আগামী দিনে মূল্যস্ফীতি আরো নেমে আসবে।“
বিবিএস মহাপরিচালক শাহজাহান আলী জানান, একমাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ১২ শতাংশ। গত মার্চে এর পরিমাণ ছিলো ৮ দশমিক ২৮ ভাগ। আর খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। মার্চে যা ছিলো ১৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
মহাপরিচালক বলেন, গ্রামীণ পর্যায়ে এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ২১ শতাংশ। আর শহরে ১১ দশমিক ৭৭ ভাগ। গত মার্চে গ্রাম ও শহরে এর হার ছিলো যথাক্রমে ৯ দশমিক ৪০ এবং ১১ দশমিক ৮৯ ভাগ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত এক বছরের (মে, ২০১১ থেকে এপ্রিল, ২০১২) গড় মূল্যস্ফীতির হার ১০ দশমিক ৮৬ ভাগ। যা আগের একই সময়ের তুলনায় বেশি। আগের বছরে একই সময়ে গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিলো ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
তিনি আরো বলেন, মার্চ মাস থেকে এপ্রিল মাসে মানুষের মজুরি হার বেড়েছে। গত মার্চে মজুরি হারের সূচক ছিলো ৬ হাজার ৬৩৯ টাকা। আর এপ্রিলে তা বেড়ে হয়েছে ৬ হাজার ৭৫৮ টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে সরকারের খোলা বাজারে চালু গম বিক্রির তথ্য তুলে ধরে শাহজাহান আলী বলেন, এপ্রিল মাসে সাড়ে ১২ হাজার টন চাল ২৪ টাকা দরে সরকার বিক্রি করেছে। যার বাজার মূল্য ছিলো ২৮ টাকা কেজি। এছাড়া সাড়ে ২৫ হাজার টন গম ১৭ টাকা ধরে বিক্রি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, শহরের ১১৩টি এবং গ্রামের ১০৬টি পণ্য ধরে তথ্য সংগ্রহ করে এবার মূল্যহার নির্ধারণ করা হয়েছে। অপরদিকে মজুরির পরিসংখ্যানে কৃষি, উৎপাদনশীল খাত, শিল্প এবং মৎস্যখাতকে হিসেবে ধরা হয়েছে।