কক্ষে বসা নিয়ে বাগবিতণ্ডার জেরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জ্যেষ্ঠ এক আইনজীবীকে সাজা দেয়ার ঘটনায় আদালতে ক্ষমা চেয়ে পার পেলেন কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিরোদা রানী রায়। এ সময় ভবিষ্যতে যেন ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের অপব্যবহার না হয় সে ব্যাপারে তাকে সতর্ক করেন আদালত।
এ সময় সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, ক্ষমতা থাকলেই নিজেদেরকে প্রশাসক বা বাহাদুর মনে করবেন না। মনে রাখবেন আপনারা জনগণের সেবক, জনগণের সেবার জন্যই আছেন। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় চলেন, বেতন পান। একজন রিকশাওয়ালাও ট্যাক্স দেন। ভুলে যাবেন না এটা স্বাধীন দেশ। সব ক্ষমতা সব সময় দেখানো উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন আদালত।
বৃহস্পতিবার আইনজীবীকে সাজা দেয়ার ঘটনায় এসি ল্যান্ড বিরোদা রানী রায় নিঃশর্ত ক্ষমার আবেদন এফিডেভিট আকারে দাখিলের পর বিচারপতি মো. হাবিবুল গণি ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এসব কথা বলেন।
আদালতে এসি ল্যান্ডের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মামুন মাহবুব। পত্রিকার কাটিং আদালতের নজরে আনা আইনজীবী সৈয়দ মহিবুল কবির ও আইনজীবী কাজী হেলাল উদ্দিনও আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া শুনানিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না ভ্রাম্যমাণ আদালতের অপব্যবহার রোধে হাইকোর্টের নির্দেশনা চান। তার সঙ্গে ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন আহমদ।
প্রথমেই বিরোদা রানী রায়ের আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমার আবেদনটি পড়ে শোনান। আবেদনে বলা হয়, ‘আমি সজ্ঞানে-স্বেচ্ছায় এটা করেছি। ওই ঘটনায় আমি অনুতপ্ত। আমি আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি। ভবিষ্যতে আর এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না।’
আদালত প্রশ্ন রাখেন, স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে মোবাইল কোর্ট আইন ভঙ্গ করে একজন প্রবীণ আইনজীবীকে সাজা দেয়ায় আপনাকে শাস্তি দেয়া হবে না? আপনি প্রসিডিং ভঙ্গ করে একজন আইনজীবীকে শাস্তি দিলেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আপনারা জনগণের প্রশাসক মনে করেন, বাহাদুর মনে করেন। আপনারা যে জনগণের সেবক এটা ভুলে যান।
এরপর আদালত এসি ল্যান্ড বিরোদা রানীকে ডায়াসের সামনে আসতে বলেন। আদালত বলেন, আপনি এ ঘটনার জন্য কি অনুতপ্ত? আপনি আবেদনে যা যা লিখেছেন তা কি জেনে বুঝে লিখেছেন? জবাবে এসি ল্যান্ড বিরোদা রানী রায় হ্যাঁ সূচক জবাব দেন।
এসি ল্যান্ড বিরোদা রানী রায়কে ক্ষমার বিষয়ে আদালত বলেন, আপনার সার্ভিস রেকর্ডে দেখা যাচ্ছে ২০১৬ সালে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। চাকরিতে আপনি নতুন। আবেদনে আপনি নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। বয়স, চাকরি এবং এ ঘটনায় অনুতপ্ত হওয়ার বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে আপনার নিঃশর্ত ক্ষমার আবেদনটি গ্রহণ করলাম।
আদালত বলেন, আপনি ইয়াং মানুষ, বয়স কম। আপনার ভবিষ্যত রয়েছে। জীবনে অনেক দূর যেতে হবে। অনেক সহিষ্ণু হতে হবে। ধৈর্য ধরতে হবে। মনে রাখবেন ভবিষ্যতে বড় হতে চাইলে আপনাকে এসব সহ্য করতে হবে।
আর আপনি যেটা করেছেন সেভাবে মোবাইল কোর্ট বসানো যায় না। পাবলিক অফিসে কাজ করতে হলে মন-মেজাজ কন্ট্রোলে রাখতে হয়। প্রয়োজনে সিনিয়রদের সহযোগিতা নেবেন। আইনি কোনো ব্যাখ্যার প্রয়োজন পড়লে আমরাও সিনিয়রদের পরামর্শ নেই। অনেক সময় অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দেই। একটি কথা মনে রাখবেন, সব ক্ষমতা সব সময় দেখানো উচিত নয়।
পরে আদালত এসি ল্যান্ড বিরোদা রানী রায়ের নিঃশর্ত ক্ষমার আবেদন গ্রহণ করে এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করেন। একই সঙ্গে প্রবীণ আইনজীবী বিনোদ বিহারীকে মোবাইল কোর্টে ৫০০ টাকা জরিমানার আদেশ সঠিক ছিল না বলে তা বাতিল করেন।
প্রসঙ্গত, ১৭ ডিসেম্বর কথা কাটাকাটির জের ধরে বিরোদা রানী রায় তার কার্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে দিনাজপুরের প্রবীণ আইনজীবী বিনোদ বিহারীকে ৫০০ টাকা জরিমানা করেন। এ ঘটনার জের ধরে এসি ল্যান্ডকে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ থেকে ভুরুঙ্গামারীতে বদলি করা হয়। পরে বিরোদা রানী রায়কে তলব করে আদেশ দেন হাইকোর্ট।