স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তিতে ৪০ হাজার মোবাতি প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে মাসব্যাপী বিশেষ উৎসব শুরু হয়েছে। বুধবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মোমবাতি প্রজ্বলন করে উৎসবের উদ্বোধন করেন তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ।
সঙ্গে সঙ্গে একাডেমি প্রাঙ্গণের বিভিন্নস্থানে ৪০ হাজার মোমবাতি জালানো হয়। বিজয়ের ৪০ বছরকে স্মরণ করে প্রতিবছরের জন্য একহাজার করে ৪০ বছরের জন্য ৪০ হাজার মোমবাতি জ্বালানো হলো।
এ সময় মেলা প্রাঙ্গণে উপস্থিত স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হাজার হাজার মানুষ মোমবাতি প্রজ্বলনে অংশ নেন।
২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী। স্বপ্নের স্বদেশ বিনির্মাণে সংস্কৃতি প্রত্যয়ী যাত্রার অংশ হিসেবে সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখার সমন্বয়ে মাসব্যাপী এ বিশেষ উৎসবের আয়োজন করেছে। এ উপলক্ষে ৩০ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলে।
রাত ১২টা ১ মিঁনিটে মাসব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করে তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাঙালি জাতির
অস্তিত্বের স্বীকৃতি হলো মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ৪০ বছর আমাদের জাতীয় জীবনের ঐতিহাসিক মাইল ফলক।
আবুল কালাম আজাদ মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ বীর শহীদ ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, তাদের কাছে আমরা ঋণী|
তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড গণতন্ত্রের পক্ষে। দেশের গণতন্ত্র ও অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে সাংস্কৃতিক কর্মীরা অনেক অবদান রাখতে পারেন।
তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তা বস্তবায়নে সাংস্কৃতিক কর্মীসহ সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
এ সময় শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কুদ্দুছ, বিশিষ্ট নাট্যকার মামুনুর রশিদসহ কবি, সাহিত্যিক ও হাজার হাজার সাংস্কৃতিক কর্মী মধ্যরাতের এ উৎসবে অংশ গ্রহণ করেন।
বৃহস্পতিবার ১ ডিসেম্বর থেকে বিজয়ের মাস শুরু হচ্ছে। বিভিন্ন সংগঠন মাসব্যাপি নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় পৃথকভাবে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে সারাদেশে বিজয় উৎসব পালনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। জাতীয় কর্মসূচির পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনসমূহ বিজয়ের মাসকে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে উদযাপন করবে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ ১ ডিসেম্বরকে মুক্তিযোদ্ধা দিবস ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) বিজয়ের মাসের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
এ ছাড়াও প্রতি বছরের মতো সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বিজয় দিবসে তিন দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
বিজয়ের ৪০ বছর উপলক্ষে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় ৭ দিনব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের সংস্কৃতি উৎসবের আয়োজন করেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে জাতীয় নাট্যশালায় মূল মিলনায়তনে উৎসবের উদ্বোধন করবেন তথ্য এবং সংস্কৃতি মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ।
উৎসব শেষ হবে ৮ ডিসেম্বর এবং প্রতিদিন ঢাকায় বিভিন্ন নাট্যদলের পরিবেশনা ছাড়াও স্টুডিও থিয়েটার হলে শিশুতোষ নাটক ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে।
উন্মুক্ত মঞ্চ প্রতিদিন বিকাল ৪টায় মুক্তিযুদ্ধের ওপর গণসংগীত, আবৃত্তি অনুষ্ঠিত হবে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর শুরু করা হত্যাযজ্ঞ চলে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
মুক্তিযুদ্ধকালীন এদেশের জামায়াতে ইসলামী ও মুসলিম লীগের নেতা-কর্মীরা পাকিস্তানিদের সহায়ক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের প্রায় ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করে।
২ লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারান। পাকিস্তানিদের চেয়ে এদেশের সন্তান ঘৃণ্য রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের অসভ্যতা ও অমানুষিক আচরণ বিশ্ববাসীকে স্তম্ভিত করে।
নয় মাসের সামরিক ও কূটনৈতিক সংগ্রামের পর ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রায় ৯৫ হাজার সৈন্য আত্মসমর্পণ করে।
মুক্তিবাহিনীকে ভারতের সামরিক সহায়তা এবং বহির্বিশ্বে সোভিয়েত ইউনিয়ন কূটনৈতিক সমর্থন দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করে।