গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট ও আমলাতন্ত্রে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত: হাসিনাকে ওকাদা

গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট ও আমলাতন্ত্রে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত: হাসিনাকে ওকাদা

গ্যাস-বিদ্যুৎ ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ বাড়ছে না বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মন্তব্য করেছেন জাপানের উপ-প্রধানমন্ত্রী কাতসুইয়া ওকাদা।

বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে ওকাদা এ মন্তব্য করেন।

জাপানি উপ-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ অমিত সম্ভাবনার দেশ। এদেশে জাপানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ আছে। তবে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকট এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে বিনিয়োগ আর বাড়ছে না।

বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

দু’দিনের সরকারি সফরে জাপানের উপ-প্রধানমন্ত্রী কাতসুইয়া ওকাদা ঢাকায় আসেন। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা আট মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি বিমানে তিনি ঢাকায় পৌঁছান।

বাংলাদেশের বিনিয়োগ ও বাণিজ্য এবং উন্নয়ন সহযোগিতার ক্ষেত্রে জাপানের উপ-প্রধানমন্ত্রীর এ সফরকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখছে সরকার।

জাপানি উপ-প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের পারস্পরিক বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদারের ওপর জোর দিয়ে বলেন, `বাংলাদেশে জাপানের বিনিয়োগ বাড়লেও বিনিয়োগকারীরা গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পদ্ধতিগত জটিলতার সম্মুখীন হন।’

তিনি প্রধানমন্ত্রীকে এসব সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দিলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, `গ্যাস ও বিদ্যুতের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদন আগের চেয়ে বেড়েছে।`

প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য খাতের পাশাপাশি গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ করতে জাপানের প্রতি আহ্বান জানান।

জাপানী উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত ও নবপ্রতিষ্ঠিত অর্থনৈতিক জোনগুলোতে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান, তাঁর সরকার খাদ্য নিরাপত্তা ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।

দীর্ঘ মেয়াদে খাদ্য গুদামজাতকরণে ওয়্যার হাউজ নির্মাণে সহযোগিতা দেওয়ার জন্য জাপান সরকারকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

বাংলাদেশকে খুবই সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে উল্লেখ করে জাপানের সফররত উপ-প্রধানমন্ত্রী কাৎসুয়া ওকাদা বলেন, ‘এ সম্ভাবনা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ চমৎকার অগ্রগতি অর্জন করতে পারবে।’

বৈঠককালে ওকাদা বলেন, ‘২০১০ সালে শেখ হাসিনার জাপান সফরের পর দু’দেশের সম্পর্ক জোরদার হয়েছে।’

জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানকে তাঁর শৈশব থেকেই উন্নয়নের একটি মডেল হিসেবে দেখার কথা উলেখ করে বলেন, ‘দেশটি বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশ্বস্ত বন্ধু।’

ওকাদার সফরে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে জাপান পাশে থাকলে বাংলাদেশ বহুক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করতে পারবে।’

স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের প্রতি জাপান সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা প্রলয়ংকরী সুনামির পরও পদ্মা সেতুর নির্মাণে সমর্থন দেওয়ার জন্য টোকিওকে ধন্যবাদ জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ ও জাপান অভিন্ন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অংশীদার এবং ১৯৭২ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকেই উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রয়েছে।’

দুর্নীতি দমনে পদক্ষেপ গ্রহণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এখন পুরোপুরি স্বাধীন ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান।’

গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের দীর্ঘ সংগ্রামের কথা উলেখ করে শেখ হাসিনা জানান, তাঁর সরকার সন্ত্রাসকে কঠোর হাতে দমন করেছে।

তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে এবং গ্রেনেড হামলার চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠাকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি এতদঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তার পথে একটি শুভ লক্ষণ।’

জাপানের উপ-প্রধানমন্ত্রী গত বছর ফুকুসিমায় প্রলয়ংকরী সুনামির পর বিভিন্ন সহায়তার জন্য শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।

সাক্ষাতকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক গওহর রিজভী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব শেখ এম ওয়াহিদুজ্জামান এবং প্রধানমন্ত্রীর সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ