টাকার অভাবে বোনের লাশের সাথে তিন দিন

টাকার অভাবে বোনের লাশের সাথে তিন দিন

৬৩ বছর বয়সী এক নারীর নিথর দেহ মেঝেতে রাখা হয়েছে। সেখানে চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে তাকে। খাটে বসে বৃদ্ধার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন তার ভাই ৭০ বছর বয়সী নীলমণি ধাড়া। বোন মারা গেলেও তার দেহ সৎকার না করে তিনদিন ধরে এভাবেই বসেছিলেন তিনি।

মৃতদেহে পচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়ালে প্রতিবেশীরা থানায় খবর দেন। শেষ পর্যন্ত বুধবার পুলিশের হস্তক্ষেপে মৃতদেহ সৎকার হয়। মৃতদেহ সৎকার না করে কয়েকদিন ধরে কেন রেখে দিলেন এ বিষয়ে নীলমণিবাবু জানান, বোনের মৃতদেহ সৎকারের টাকা তার কাছে ছিল না। উলুবেড়িয়ার ময়রাপড়ার এই ঘটনা যেন কলকাতার রবিনসন স্ট্রিটের কথা মনে করিয়ে দিল। সেখানেও বোনের মৃত্যুর পর দীর্ঘদিন ধরে দেহ রেখে দিয়েছিলেন তার ভাই।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, অসুস্থ হয়ে পড়ায় কয়েকদিন আগে করবীদেবীকে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করান নীলমণিবাবু। গত ২৪ ডিসেম্বর রাতে সেখানে মারা যান করবীদেবী। পরদিন সকালে বোনের মরদেহ নিয়ে নীলমণিবাবু বাড়িতে এলেও দেহের সৎকার করাতে পারেননি। প্রতিবেশীরা দেহ সৎকারের করার কথা বললে তিনি জানান, তার কাছে টাকা নেই। প্রতিবেশীরা সৎকারের জন্য চাঁদা তুলে দিতে চাইলে বৃদ্ধ জানান, তিনি কারও সাহায্য নেবেন না। শুধু তাই নয়, জোর করে কেউ দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করলে তিনি আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিও দেন।

পুলিশ এলেও প্রথমে তাদের বাড়িতে ঢুকতে বাধা দেন নীলমণিবাবু। শেষ পর্যন্ত তাকে বুঝিয়ে পুলিশ বাড়িতে ঢোকে। পুলিশ জানায়, দোতলার ঘরের মেঝেতে চাদর পেতে শোয়ানো ছিল করবীদেবীর দেহ। পাশের ঘরে ছিলেন আর এক বোন পূরবীদেবী। যদিও করবীদেবীর দেহ তিনদিন ধরে আটকে রাখা নিয়ে তিনি কিছু বলতে চাননি। এর পর স্থানীয় একটি ক্লাবের সহায়তায় দেহ উদ্ধার করে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বোনের মুখাগ্নি করেন নীলমণিবাবুই। সৎকারের খরচ দিয়েছে পুলিশ।

প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, আর্থিক কষ্টে ছিল পরিবারটি। নীলমণিবাবুর উপার্জন বলতে কিছুই ছিল না। কিন্তু কারও কাছে কোনও সাহায্যও চাইতেন না তিনি। কিছু জমিজমা থাকলেও সে সব বিক্রি করে কোনওমতে তাদের চলছিল। টাকার অভাবে না সারানোর ফলে দোতলা বাড়িটিও ভগ্নপ্রায়। তিন ভাইবোন কারও সঙ্গে মেলামেশাও করতেন না।

আন্তর্জাতিক