বাংলাদেশে উড়োজাহাজের ল্যান্ডিং, পার্কিং চার্জ এবং জেট ফুয়েলের মাত্রাতিরিক্ত দামের কারণে এগোতে পারছে না বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো। গত দুই যুগে দেশে ৯টি বেসরকারি উড়োজাহাজ সংস্থা এভিয়েশন ব্যবসায় নামে।
সঙ্কটাপন্ন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে না পেরে এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ছয়টি এয়ারলাইন্স। বাজারে থাকা তিনটির অবস্থাও সঙ্কটাপন্ন।
বেবিচকের বিশাল অঙ্ক বকেয়া রেখে দু’বছর আগে কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। প্রতিষ্ঠানটির কাছে সারচার্জসহ বেবিচকের বর্তমান পাওনা দেড়শ কোটি টাকার বেশি। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ অনেক আগেই এই টাকা মওকুফ চেয়ে আবেদন করেছে।
এয়ারলাইন্সগুলো বলছে, সিভিল এভিয়েশন নির্ধারিত বিভিন্ন চার্জ এবং পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে জেট ফুয়েলের দামের ব্যবধান অনেক। যে কারণে মুনাফা তো দূরের কথা, আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় লোকসানের পড়েছে অধিকাংশ বেসরকারি এয়ারলাইন্স।
অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সব রুটে অ্যারোনটিক্যাল, উড়োজাহাজের ল্যান্ডিং ও পার্কিংসহ সব ধরনের চার্জ মওকুফ চেয়ে চলতি মাসেই বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাবে বেসরকারি তিন এয়ারলাইন্স মালিকরা। আগামী পাঁচ বছর অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সব রুটে অ্যারোনটিক্যাল, উড়োজাহাজের ল্যান্ডিং ও পার্কিংসহ সব ধরনের চার্জ মওকুফ চাইবে তারা।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের এমডি আবদুল্লাহ আল মামুন, রিজেন্ট এয়ারওয়েজের এমডি মাশরুফ হাবিব এবং নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান এ আবেদনে চার্জ মওকুফের পাশাপাশি জেট ফুয়েলের দাম কমানোসহ বেসরকারি এয়ারলাইন্সের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানেও মন্ত্রীর সহায়তা চাইবেন।
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন জাগো নিউজকে বলেন, বিভিন্ন ধরনের চার্জ মওকুফের বিষয়টি নিয়ে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর আবেদন আমরা সব সময় বিবেচনা করি। এসব নিয়ে অতীতে অনেক বৈঠক হয়েছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, বেবিচকের আয়ের প্রধান উৎস উড়োজাহাজের ল্যান্ডিং, পার্কিং চার্জ। এ সব চার্জ মওকুফ বা কমানো হলে ব্যয় নির্বাহ জটিল হয়ে পড়ে। আর এ অর্থ দিয়েই বিমানবন্দর মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। কিন্তু এ সব চার্জ দেয়া থেকে অব্যাহতি পেতে সর্বদা জোর তৎপরতা চালায় বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো।
বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবার অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট শেষে ল্যান্ডিংয়ের জন্য একটি ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজের ক্ষেত্রে ২ হাজার ৪০৩ টাকা চার্জ দিতে হয়। একইভাবে এটিআর-৭২কে ৩ হাজার ৯২২, এমব্রয়ার-১৪৫কে ৪ হাজার ১৭৫, বোয়িং-৭৩৭কে ১৮ হাজার ৬১৯, এমডি-৮৩কে ১৯ হাজার ১৪৬, এয়ারবাস-৩১০কে ৫২ হাজার ৩৩১ টাকা চার্জ দিতে হয়।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট শেষে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যে কোনো বিমানবন্দরে ল্যান্ডিংয়ের জন্য একটি ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজকে ৩৩ হাজার ৯২৪, এটিআর-৭২কে ৪৬ হাজার ৩১৫, এমব্রয়ার-১৪৫কে ৪৬ হাজার ৮৩২, বোয়িং-৭৩৭কে ১ লাখ ১২ হাজার ৩৪০, এমডি-৮৩কে ১ লাখ ২০ হাজার ৪১৮ ও এয়ারবাস-৩১০কে ২ লাখ ৮০ হাজার ৫০৮ টাকা চার্জ দিতে হয়।
এ বিষয়ে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের মতো আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের অ্যারোনটিক্যাল চার্জসহ অন্যান্য চার্জ সহনীয় পর্যায়ে নির্ধারণ করলে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসায় বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর টিকে থাকা সহজ হবে। আশপাশের দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে অ্যারোনটিক্যাল চার্জ ও জেট ফুয়েলের দাম বেশি।
উল্লেখ্য, অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জবাবদ গত আগস্ট মাস পর্যন্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে বেবিচকের পাওনা ১শ ৪৯ কোটি ৫১ লাখ ৩৪ হাজার ৯০ টাকা। রিজেন্ট এয়ারওয়েজের কাছে পাওনা ২০ কোটি ৮১ লাখ ৬ হাজার ৪৭ টাকা।
তবে দেশের বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর ভালো না করার জন্যে উড়োজাহাজের অতিরিক্ত ল্যান্ডিং, পার্কিং চার্জকে কারণ বলে মনে করেন না বেবিচক চেযারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল নাঈম হাসান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অতিরিক্ত ল্যান্ডিং, পার্কিং চার্জ নয় বরং বলা যায় সংশ্লিষ্টদের ব্যবসায়িক চিন্তা ছিল না, বন্ধ হওয়া বেশির ভাগ এয়ারলাইন্সের মালিকপক্ষের চিন্তা ভালো ছিল না। উদ্দেশ্য খারাপ হলে ব্যবসায় টিকে থাকা যায় না।
তিনি বলেন, এয়ারলাইন্সগুলোর দাবি-দাওয়ার বিযয়ে আমরা সবসময় ইতিবাচক।