প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উচ্চ পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেছেন, এই কর্মকর্তাদের অনেকেই জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ ‘জ্ঞানেই নিরাপত্তা’ কলেজের এই মূলমন্ত্রে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশকে টেকসই উন্নয়ন এবং আত্মনির্ভরশীলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
তিনি সোমবার মিরপুর সেনানিবাসের ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজের শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে (ডিএসসিএসসি) ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ (এনডিসি) এবং আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স (এএফডব্লিুওসি)-এর গ্র্যাজুয়েশন উৎসবের বক্তৃতায় একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে সর্বশেষ প্রযুক্তি ও আধুনিক সরঞ্জামাদির সরবরাহ নিশ্চিত করেছে এবং সর্বোত্তম প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ স্থাপনা তৈরি করেছে।
একটি পেশাদার ও প্রশিক্ষিত সশস্ত্র বাহিনী প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা সর্বদা কাজ করে যাচ্ছি, – বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের কৌশলগত গুরুত্ব ক্রমাগত বেড়েই চলেছে এবং বর্তমানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ঐক্য উন্নয়নে বাংলাদেশ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও গৌরবময় ভূমিকা রাখছে। আমাদের পররাষ্ট্র নীতির মূল মন্ত্রই হল : ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরীতা নয়’। ‘বঙ্গবন্ধু প্রণীত এই নীতিতে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা আন্তঃরাষ্ট্রীয় সু-সম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিতে সচেষ্ট আছি,’ -বলেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তৃতায় ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের কমান্ড্যান্ট লে. জেনারেল চৌধুরী হাসান সোহরাওয়ার্দী ডিফেন্স কলেজের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখায় তাঁকে ধন্যবাদ জানান।
এ বছর ৫৩ জন কর্মকর্তা ডিফেন্স কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। এরমধ্যে সেনাবাহিনীর ২৯ জন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, বাংলাদেশ নেভির ৫ জন কমোডর, বিমানবাহিনীর দু’জন এয়ার কমোডর এবং তিনজন গ্রুপ ক্যাপ্টেন, সিভিল সার্ভিস-এর ১১ জন যুগ্ন সচিব, পুলিশের দু’জন ডিআইজি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক রয়েছেন। এছাড়াও ২৭ জন বিদেশী কর্মকর্তা- যার মধ্যে ৩ জন ভারতীয়, ৩জন শ্রীলংকান, ১০ জন নাইজেরীয়, ২ জন সৌদি আরবীয় এবং একজন করে মিশর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, নেপাল, নাইজার, ওমান, পাকিস্তান, তানজানিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোর্সে অংশগ্রহণ করেন।
আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স (এএফডব্লিুওসি)-তে ২৫ লেফটেন্যান্ট কর্নেল, বাংলাদেশ নেভির একজন ক্যাপ্টেন ও চারজন কমোডর এবং চারজন গ্রুপ ক্যাপ্টেন ও একজন উইং কমান্ডার অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী পরিষদ সদস্যগণ, সংসদ সদস্যগণ, মন্ত্রী পরিষদ সচিব, তিন বাহিনী প্রধানগণ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, উর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং অধ্যাপকবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধিবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জেনে খুবই আনন্দিত যে, আপনারা রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে গভীর পর্যবেক্ষণ, পড়ালেখা ও গবেষণা করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে সামাজিক-গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, আইনের শাসন, রাজনৈতিক সংস্কৃতি, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও জাতীয় নিরাপত্তা। আপনারা দেশ পরিচালনার বিভিন্ন সমস্যা ও ভবিষ্যত কর্মপন্থা সম্পর্কেও জ্ঞান লাভ করেছেন। এসবের বুদ্ধিবৃত্তিক প্রয়োগ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জাতীয় অগ্রগতির ধারাবাহিকতা আরও বেগবান করতে সহায়ক হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালের আগে সশস্ত্র বাহিনীর জ্যেষ্ঠ ও মধ্যম সারির কর্মকর্তাদের উচ্চমানের প্রশিক্ষণের জন্য আমাদের নিজস্ব কোন প্রতিষ্ঠান ছিল না। আপনাদের উচ্চশিক্ষার কথা বিবেচনা করে আমরা ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদকালে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ বা এনডিসি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। যা বর্তমানে একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের বর্তমান সুখ্যাতি ও বহির্বিশ্বে এর সু-পরিচিতি আমাদের জন্য সত্যিই একটি গর্বের বিষয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ প্রতিষ্ঠানের গ্রাজুয়েটগণ মন্ত্রিপরিষদ সচিব, সেনা-নৌ-বিমান বাহিনীর প্রধান ও পুলিশ প্রধানের মত রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন বা হচ্ছেন। এমনকি দেশের অন্যান্য পেশার মানুষ যেমন ব্যবসায়ী, শিক্ষক ও সংসদ সদস্যগণ বর্তমানে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের ক্যাপস্টোন কোর্সে অংশগ্রহণে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
তিনি বলেন, শুধু সশস্ত্র বাহিনীর ভিতরেই নয়, ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ কৌশলগত স্তরের একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেসামরিক পরিমন্ডলেও সমাদৃত হচ্ছে। সরকারি উচ্চপদস্থ বেসামরিক কর্মকর্তাগণ এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রভূত অবদান রেখে চলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এনডিসি ও এএফডব্লিউসি কোর্স ছাড়াও, এনডিসি কর্তৃক পরিচালিত ‘ক্যাপস্টোন কোর্স’-এর মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং রাষ্ট্র পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহের ওপর সম্যক জ্ঞান লাভ করেছেন। সামরিক-অসামরিক সম্পর্ক উন্নয়নে নিঃসন্দেহে এনডিসি একটি মাইল-ফলক হিসেবে কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নানাবিধ সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বিপন্ন মানবতার ডাকে সাহায্যের হাত বাড়াতে আমরা কার্পণ্য করিনি। প্রতিবেশী মিয়ানমার হতে বিতাড়িত ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে আমরা আশ্রয় ও মানবিক সহায়াতা দিয়ে যাচ্ছি। মানবিকতার মানদন্ডে বাংলাদেশ আজ একটি মর্যাদাপূর্ণ ও সংবেদনশীল রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনের পাশাপাশি, দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে, নারী-শিক্ষা ও ক্ষমতায়নে এবং সার্বিক অর্থে জনগণের অর্থনৈতিক স্ব-নির্ভরতা অর্জনসহ সকলক্ষেত্রে আমাদের সরকার ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। বিশ্বায়ন ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সচেষ্ট আছি। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের পরিম-লে প্রবেশ করেছে। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করব-ইনশাআল্লাহ।