চীনের বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী চেন গুয়াংচেং বেইজিংয়ের মার্কিন দূতাবাস ছাড়ার পর বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আশ্রয় চেয়েছেন। তার এ আবেদন চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
সেইসঙ্গে চেনকে মার্কিন দূতাবাস থেকে বের করে আনতে দুপক্ষের মধ্যে হওয়া চুক্তি নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।
বুধবার চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের ব্যাপারে কমিউনিস্ট পার্টি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অভাবনীয় ছাড় পাওয়ার পরই চেন মার্কিন দূতাবাস ছাড়েন এবং চীনেই থাকার সিদ্ধান্ত নেন বলে জানানো হয় খবরে।
কিন্তু চেন বলছেন, চুক্তির আওতায় চীনে থেকে গেলে তিনিসহ তার পরিবারের নিরাপত্তা ক্ষুন্ন হওয়ার আশঙ্কা আছে। এ পরিস্থিতিতে কী করণীয় তা নিয়ে বিপাকে পড়েছে ওবামা প্রশাসন।
চেনের দেশত্যাগের অনুরোধ সম্পর্কে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করেনি বরং নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছে।
ওদিকে, চেন বৃহস্পতিবার হাসপাতাল থেকে টেলিফোনে বলেছেন, স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পর তিনি মন পরিবর্তন করেছেন। কারণ পরিবারের ওপর নানা হুমকি আসছে বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী।
চেন বলেন, “আমি খুবই অনিরাপদ বোধ করছি। আমার অধিকার এবং নিরাপত্তা এখানে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব না।” তার সঙ্গে একমত প্রকাশ করে পরিবারের সদস্যরাও যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়লাভের সিদ্ধান্তে সায় দিয়েছে বলে জানান চেন।
গৃহবন্দিত্ব থেকে পালিয়ে বেইজিংয়ের মার্কিন দূতাবাসে আশ্রয় নেওয়ার ছয়দিন পর সেখান থেকে বের হয়ে আসেন দৃষ্টিশক্তিহীন চেন গুয়াংচেং। এ নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে তিনি ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর চীন কর্তৃপক্ষের দমনপীড়ন প্রতিরোধের প্রতীকে পরিণত হন।
চীনে তার থাকার বন্দোবস্ত করতে চুক্তিবদ্ধ হয় ওয়াশিংটন-বেইজিংও।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় চেন স্বেচ্ছায় মার্কিন দূতাবাস ছেড়েছেন বলে জানালেও তার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার সমালোচনা করেছে।
দূতাবাস ছাড়ার পর চেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত গেরি লোকে ও অন্যান্য মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বেইজিংয়ের চাওয়িয়াং হাসপাতালের ভিআইপি সেকশনে যান। সেখানে চেনের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তাকে তার স্ত্রী এবং সন্তানদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
চেনকে তার পরিবারসহ চীনের একটি নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়ার নিশ্চয়তাও দেওয়া হয় বলে জানায় বিবিসি।
সত্যিকারের মুক্তির আস্বাদ পেয়ে চেন খুশি জানিয়ে এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান চীনেই থাকতে চেয়েছেন তিনি। কিন্তু চীনা কর্তৃপক্ষ চেনকে সত্যিই কতটা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে দেবে তা নিয়ে সংশয়ের মধ্যে ওয়াশিংটন জানায়, তার সঙ্গে সরকার কি আচরণ করে তা নিবিড়ভাবে লক্ষ্য রাখবে তারা। চেনের কর্মকাণ্ডকে কোনোভাবে ব্যাহত করার চেষ্টা চললে নতুন করে সংঘাত দেখা দেবে বলেও হুঁশিয়ার করে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন উচ্চ পর্যায়ের বার্ষিক বৈঠকের জন্য চীনে পৌঁছানোর পরপরই চেনের দূতাবাস ছাড়ার ঘোষণা আসে। একজন মার্কিন কর্মকর্তা খবরটি নিশ্চিত করেন।
দূতাবাসে চেনের আশ্রয়লাভের ঘটনায় ইতোমধ্যেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষমাও চাইতে বলা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিউ ওয়েইমিন এক বিবৃতিতে বলেন, “একথা বলতেই হচ্ছে যে, মার্কিন দূতাবাস অযাচিতভাবে চীনের নাগরিক চেন গুয়াংচেংকে তাদের হেফাজতে নিয়েছে। এ ঘটনায় চীন চরমভাবে অসন্তুষ্ট।”
এতে আরো বলা হয়, “যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপ চীনের অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ। চীন তা মেনে নিতে পারে না। এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষমা চাইতে হবে। বিষয়টির পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করতে হবে তাদেরকে। দায়ীদের শাস্তি দিতে হবে এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর ঘটবে না সে নিশ্চয়তা দিতে হবে।”
বেইজিং এর রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাকের প্রফেসর শি ইংহং বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কে এ বিষয়টি যে মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনতে পারে তা যুক্তরাষ্ট্রকে বুঝতে হবে।”