মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি রাষ্ট্রপতির আহ্বান

মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি রাষ্ট্রপতির আহ্বান

 রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা জোরদারে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে বিচারপতিদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, বিচার বিভাগ বর্তমানে বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত এবং মামলা জট সমস্যার মোকাবেলা করছে।
হামিদ শনিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন -২০১৭’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ভাষণে বলেন, আদালত মানুষের শেষ ভরসার স্থল । এতে আশা করা হয়, দেশ ও জনগণের কল্যাণে অগ্রাধিকার দিয়ে বিচার প্রার্থীদের ভোগান্তি হ্রাসে বিচারকরা নিরপেক্ষভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন।
রাষ্ট্রপতি মোকদ্দমা শুনানি সমাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে আদেশ বা রায়ের সারাংশ ঘোষণা বা যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে আদেশ বা রায় প্রদানের তারিখ ঘোষণা এবং যথাসময়েই তা সম্পন্ন করার জন্য বিচারকদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, তাহলে বিচার বিভাগের ওপর জনগণের আস্থা আরো সুদৃঢ় হবে।
হামিদ সুনির্দিষ্টভাবে বলেন, মোকদ্দমার যুক্তিতর্ক শুনানির পর যখন রায় প্রকাশে বিলম্ব হয়, তখন সে বিলম্বের একক দায় সংশ্লিষ্ট বিচারককেই নিতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিচারে কাংক্ষিত গতি আনয়নের জন্য পর্যাপ্ত বিচার কক্ষ, বিচারকদের শূন্য পদে নিয়োগ এবং বিচারক ও মোকদ্দমার সংখ্যায় যুক্তিসঙ্গত ভারসাম্য রক্ষা করা আবশ্যক।
ন্যায়বিচার প্রাপ্তি মানুষের মৌলিক অধিকারÑ এ কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ দারিদ্র্য, অশিক্ষা ও নানা জটিলতার কারণে অনেক সময় মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।
তিনি,সনাতন পদ্ধতির আদালত ব্যবস্থাপনার পাশাপাাশি আদালতের ভৌত অবকাঠামোর অপর্যাপ্ততা, পুরাতন স্থাপনা ইত্যাদির কারণে সুষ্ঠুভাবে বিচার কার্যপরিচালনা করা অনেক সময় কষ্টকর হয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও বিচারকগণ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারসহ বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার নিষ্পত্তিতে প্রশংসনীয় অবদান রাখছেন। গতবছরের তুলনায় চলতি বছরে মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যা আশাব্যঞ্জক।
সরকার ইতোমধ্যে বিচারালয়ের অবকাঠামো নির্মাণে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে এবং এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বিচারকরা একটি উন্নত পরিবেশে কাজ করতে পারবেন বলে রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ কনে।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ তথা নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগের মধ্যে সুসম্পর্ক ও সমন্বয়ের কোন বিকল্প নেই।
গণতন্ত্রে পূর্ণতার জন্য এই তিনটি অঙ্গের পৃথক অস্তিত্ব অপরিহার্য। তিনি দেশের ও জনগণের কল্যাণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে এই তিনটি পৃথক অঙ্গের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, এক বিভাগের কর্মকা-ের যেন অন্য বিভাগের কর্মকা-ে কোনভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়, অথবা জাতীয় স্বার্থ বিঘিœত না হয়।
রাষ্ট্রপতি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার দেশের আইনের শাসনের পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে বদ্ধপরিকর।
রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় রূপকল্প-২০২১ ও রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপ্রতি মো. আবদুল ওহাহ্্হাব মিঞা, আইন-বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক এমপি, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বিকাশ কুমার সাহা এবং সুপ্রিম কোর্টের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. জাকির হোসেন বক্তব্য রাখেন।
সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারকগণ এবং প্রায় দেড় হাজার বিচারক দিনব্যাপী এই বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে যোগ দেন।

বাংলাদেশ