শিল্প ও আবাসিকে বিশেষ শ্রেণির গ্রাহকদের বর্ধিত দামে নিরবছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে চায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) বর্ধিত দর কার্যকর করার জন্য এরই মধ্যে প্রস্তাব জমা দিয়েছে পিডিবি।
পিডিবির প্র্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২ মে গণশুনানির তারিখ ধার্য করেছে বিইআরসি। এদিন বেলা ১১টায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) এ শুনানি হবে বলে কমিশন সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে, এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে সাধারণ শ্রেণির গ্রাহকদের দুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
বিইআরসি সদস্য প্রকৌশলী ইমদাদুল হক জানিয়েছেন, ‘ওই দিন সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, শিল্পাঞ্চল ও আবাসিক এলাকায় বর্ধিত দামে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়া হবে কি না।’
পিডিবির দেওয়া প্রস্তাবে আবাসিকে প্রতি ইউনিট ১৩ দশমিক ১৫ টাকা, শিল্পে ১৬ দশমিক ৭৩ টাকা (১৩২ কেভি লাইন), ১৭ দশমিক ৫২ টাকা (২২ কেভি লাইন) ও ১৮ দশমিক ২৩ টাকা (১১ কেভি লাইন) মূল্য নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, আটটি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ৭০ শতাংশ পরিচালনা করলে ৭২৫ মেগাওয়াট বাড়তি বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এতে করে শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে লোডশেডিংও কমে আসবে।
এদিকে, তাদের এই প্রস্তাবকে বাস্তবতাবিবর্জিত বলে মন্তব্য করেছেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক সামছুল আলম।
সামছুল আলম জানান, এর আগেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র ৬০ শতাংশ পরিচালনার কথা বলে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে পিডিবি। তাদের এ উদ্যোগ কোনোভাবেই সঠিক হতে পারে না।
তিনি বলেন, ‘এতে করে শুধু সাধারণ গ্রাহকদের দুর্ভোগ বাড়বে। শিল্পকে লোডশেডিং মুক্ত করা হবে আর লোডশেডিং বাড়বে সাধারণ গ্রাহকদের। রাষ্ট্র জনগণের সঙ্গে এই আচরণ করতে পারে না।’
বিইআরসি সদস্য প্রকৌশলী ইমদাদুল হক বলেন, ‘সবার মতামত নেওয়ার জন্যই গণশুনানি। সবাই মিলে যদি ভালো মনে করে তাহলে বাস্তবায়ন হবে।’
গত মার্চে পিডিবি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সময় বলেছে লোডশেডিং এক ঘণ্টায় সীমাবদ্ধ রাখার জন্য তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ৬০ শতাংশ চালাতে হবে। কিন্তু এখন অনেক স্থানে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং চলছে।
অথচ একই কারণ দেখিয়ে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে চায় পিডিবি। এ প্রসঙ্গে প্রকৌশলী ইমদাদুল হক বলেন, ‘২ মের গণশুনানিতে আপনারা এসে প্রশ্ন করেন। আমরাও বিষয়টি বিবেচনায় আনব।’
উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে আট হাজার তিন মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার মধ্যে বিকল ও মেরামতে থাকা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাদ দিলে সাত হাজার ৫৫১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম পিডিবি। তবে দিনের বেলা কমবেশি চার হাজার রাতে কমবেশি পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
পিডিবির ওয়েবসাইট দেখলে মনে হবে তারা কম উৎপাদন করার রেকর্ডের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ২৬ এপ্রিল বিকেল ৪টায় ৪ হাজার ১২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, তারপর দিন ২৭ তারিখে কমিয়ে করা হয় ৪ হাজার ৮ মেগাওয়াট এবং রোববার ২৯ এপ্রিল উৎপাদন করা হয় ৪ হাজার ৭২ মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের নিম্নমুখী এই অবস্থায় সারাদেশে চলছে দুর্বিসহ লোডশেডিং। সকাল দুপুর রাত মানছে না বিদ্যুতের আসা-যাওয়া। দেশের অনেক এলাকায় ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে রোববার হরতালের দিনেও।