সিলেটে স্কলার্সহোমে জাতীয় সংগীত অবমাননার অভিযোগ

সিলেটে স্কলার্সহোমে জাতীয় সংগীত অবমাননার অভিযোগ

সিলেট নগরের অন্যতম বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্কলার্সহোমের পাঠানটুলা ক্যাম্পাসে (প্রাথমিক শাখায়) নিয়ম না মেনে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে সংবিধান লঙ্ঘন হচ্ছে। রোববার এমন অভিযোগ করেছেন স্কলার্সহোম পাঠানটুলা ক্যাম্পাসের কয়েকজন অভিভাবক। বিষয়টি নিয়ে তারা কয়েকবার প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপও করেছেন কিন্তু ফল হয়নি বরং উল্টো তাদেরকেই হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে।

পরে সচেতন অভিভাবকদের পক্ষে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ফুজায়েল আহমদ এবং ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।

অভিযোগে তারা উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশ সংবিধানে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সময় সোজা হয়ে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেয়া আছে, কিন্তু সিলেটের স্কলার্সহোম কর্তৃপক্ষ জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সময় ডান হাত বাম বুকের উপর রেখে পরিবেশন করার জন্য শিক্ষক, শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীদেরকে বাধ্য করছেন। যা বাংলাদেশ সংবিধানবিরোধী এবং এই শিক্ষার ফলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভুল শিক্ষার দিকে ধাবিত হচ্ছে।’

জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে স্কলার্সহোম কর্তৃপক্ষ যেন তাদের ভুল চিন্তা ভাবনা থেকে সরে এসে সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন এটাই প্রত্যাশা করছেন অভিভাকেরা।

সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জগদীষ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকেই সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত গেয়ে এসেছি।

বাংলাদেশ স্কাউট সিলেট আঞ্চলের কমিশনার মুবিন আহমদ জায়গীরদার বলেন, সারাজীবন স্কাউটের সাথে কাটালাম। বুকে হাত রেখে জাতীয় সংগীত কখনো গাইনি। তবে সিলেটের একটি স্কুলে আমি এমন নিয়ম দেখে প্রতিবাদ করেছিলাম। এতদিন যেভাবে সবাই অ্যাটেনশন মুডে গেয়েছেন এখনো তেমন গাইবেন।

এ বিষয়ে স্কলার্সহোমের একাডেমিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ড. কবীর চৌধুরী বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। দেশকে গভীরভাবে ভালবাসি। দেশের প্রতি গভীর ভালবাসা থেকেই আমরা জাতীয় সংগীত গাইবার সময় ডান হাতটি বাম বুকের উপরে রাখি। তিনি আরো বলেন, সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গাওয়াটা সঠিক আর বুকে হাত দিয়ে গাওয়াটা ভুল এই বিষয়টির দালিলিক প্রমাণ পেলে আমি সংশোধন করে নিব।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) আবু সাফায়াৎ মুহম্মদ শাহেদুল ইসলাম বলেন, স্কলার্সহোমে বুকে হাত দিয়ে জাতীয় সংগীত গাওয়ার বিষয়টি আমাদের লিখিতভাবে অভিহিত করা হয়েছে। আমরা সরেজমিন তদন্ত করে বিষয়টি দেখবো। জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় বুকে হাত দিয়ে গাইতে হবে বিষয়টি আমাদের সংবিধানে নেই। উনারা কোথায় পেলেন সেটাই খতিয়ে দেখা হবে।

১৯৭৮ সালেই জাতীয় সংগীত বিধিমালা-১৯৭৮ প্রণয়ন করা হয়েছে। বিধিমালা অনুযায়ী জাতীয় সংগীত উপস্থাপনের কিছু নিয়ম রয়েছে। ২৫ লাইনের এই গানটির ১০ লাইন জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃত।

জাতীয় সংগীতের অবমাননা ঠেকাতেই কয়েক বছর আগে হাইকোর্টের একটি রিট হয়েছিল। তাতে বলা হয়, মুঠোফোনের রিংটোন হিসেবে জাতীয় সংগীত ব্যাবহার করা যাবে না। কারণ এটি অর্ধেক হবার পরেই কেটে যায় এবং এতে করে জাতীয় সংগীতের অবমাননা হয়।

জেলা সংবাদ