চিত্রনায়ক সালমান শাহের অপমৃত্যুর মামলার তদন্তের অগ্রগতি বিষয় প্রতিবেদন দাখিল করেছে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সোমবার (২০ নভেম্বর) ঢাকা মহানগর হাকিম দেব্রবত বিশ্বাসের আদালতে এ প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম (বাবুল)।
প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ‘প্রয়াত চিত্রনায়ক সালমান শাহের মা নিলুফা চৌধুরি ওরফে নীলা চৌধুরিকে ঘটনার সর্ম্পকে জিজ্ঞাসা করি। ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট অতিরিক্ত সাক্ষী হুমায়ুন কবির, আ. সালাম, দেলোয়ার হোসেন শিকদার, আ. খালেক হাওলাদার, বাদল খন্দকার (চলচিত্র পরিচালক), শাহ আলম কিরণ (চলচিত্র পরিচালক), মুশফিকুর রহমান গোলজার, এস এম আলোক সিকদার ও হারুন আর রশিদের ঘটনা বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে ১৬১ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করি। সাক্ষীদের ঠিকানা নির্ণয়ের জন্য জন্য কতিপয় সাক্ষীর স্থায়ী ঠিকানায় অনুসন্ধান স্লিপ ইস্যু করি। রুবির ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করি। মামলাটির তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।’
এর আগে ২৫ সেপ্টেম্বর প্রয়াত চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলা পুনঃতদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। এ দিন মামলা তদন্ত সংস্থা পিবিআই প্রতিবেদন দাখিল না করায় ঢাকা মহানগর হাকিম মাহমুদা আক্তার প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২০ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।
২০১৬ সালের ৭ ডিসেম্বর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) পুনঃতদন্ত তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন আদালত।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহ। ওই সময় এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা করেন তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করার আবেদন জানান তিনি। অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি একসঙ্গে তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত। সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনাটি তদন্ত করে ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি।
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহর মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদন গৃহীত হয়। সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী রিভিশন মামলা করেন। ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান আদালত। এরপর প্রায় ১২ বছর মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে ছিল।
২০১৪ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারক বিকাশ কুমার সাহার কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। এ প্রতিবেদনে সালমান শাহর মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর ছেলের মৃত্যুতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেবেন বলে আবেদন করেন।
২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলা চৌধুরী ঢাকা মহানগর হাকিম জাহাঙ্গীর হোসেনের আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের নারাজির আবেদন দাখিল করেন।
নারাজি আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন তার ছেলে সালমান শাহর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। আদালত নারাজি আবেদনটি মঞ্জুর করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে তদন্তভার প্রদান করেন।
মামলাটিতে র্যাবকে তদন্ত দেয়ার আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ গত বছরের ১৯ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন মামলা করেন।
সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ-৬ এর বিচারক ইমরুল কায়েস রাষ্ট্রপক্ষের রিভিশনটি মঞ্জুর করেন এবং র্যাব মামলাটি আর তদন্ত করতে পারবে না বলে আদেশ দেন।