প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা ও তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন বিষয়ে বাংলাদেশ আজ নজিরবিহীন সঙ্কটের মুখোমুখি। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার মূল উৎপত্তি মিয়ানমারে এবং এর সমাধান মিয়ানমারকে করতে হবে।
বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে মৌলভীবাজার-২ আসনের এমপি আবদুল মতিনের এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিককালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সামরিক অভিযান ও সহিংসতার প্রেক্ষিতে প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখনকার পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। দেশের সীমিত সম্পদের মধ্যেও আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি, খাদ্য, বাসস্থান, স্যানিটেশন, পানি, চিকিৎসা সুবিধাসহ সব ধরনের মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি।
‘রোহিঙ্গাদের জন্য সরকার কিছুই করেনি এবং ব্যর্থ’ খালেদা জিয়ার এ মন্তব্য সম্পর্কে ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের গ্রামে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে ছাগলে কি-না খায় পাগলে কি-না বলে। আসলে চক্ষু থাকিতে যে অন্ধ তাকে দেখাবে কে? এটা হচ্ছে একটা অনুভূতির ব্যাপার, বোধের ব্যাপার, এদের তা নেই। খালেদা জিয়া সেখানে যেভাবে ঢাক ঢোল পিটিয়ে লাট বহর নিয়ে গেলেন তাতে তিনি দুর্গতদের দেখতে গেলেন না বর যাত্রী হিসেবে গেলেন তা আমার বোধগম্য না। একটা শো ডাউন করার ইচ্ছে তাদের ছিল তা তিনি করেছেন, কিন্তু মানবিক সহায়তা করার অভ্যাস বা ইচ্ছে তাদের নেই। তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে আরও একবার রোহিঙ্গারা এদেশে প্রবেশ করেছিল। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে আমি আগেই গিয়েছিলাম।
কিন্তু সরকার প্রধান হিসেবে খালেদা জিয়া সেখানে সময়মতো পৌঁছান নাই। কাজেই আওয়ামী লীগ সবসময় দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ায়, এটি আমাদের রাজনীতিরই একটা অঙ্গীকার। বিএনপি-জামায়াত দেখানোর জন্য যতটা করে, আন্তরিকতার জন্য ততটা করে না। সবসময় ব্যর্থ তিনি সফলতা কিভাবে দেখবেন। ব্যর্থতা দেখানোর জন্য বিএনপি যতটা, সফলতা দেখানোর জন্য তাদের সক্ষমতা ততটা নেই। ১৯৯৬ সালে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থাকতে পারেনি, দেড় মাসের মধ্যে তিনি পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন। জনগণ তাদের বিতাড়িত করেছিল। তারা আগুনে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। গাড়িতে আগুন দিয়েছে। তারা এসব করে। বিএনপি নেত্রী সবসময়ই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। তিনি ক্ষমতায় এসে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এমনকি আমি নাকি বিরোধী নেতা হিসেবেও আসতে পারব না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যাটি তো তাদেরই সৃষ্টি। তার স্বামী জিয়াউর রহমানই তো সমস্যার সৃষ্টি করে রেখে গেছেন। ঘোলা পানিতে কীভাবে মাছ শিকার করবে তা তারা ভালোই জানে, এটা বাস্তবতা। তাই তার বক্তব্য আমি ধর্তব্যের মধ্যে আনি না।
আবদুর রহমান বদির সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবার কারণে সেখানকার স্থানীয় গরিব মানুষ কিছুটা সমস্যায় পড়েছেন। এদের রেশনসহ সুযোগ সুবিধা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাদের জীবন জীবিকার সুবিধা দেয়া, তারা যাতে অভুক্ত না থাকে তার ব্যবস্থা আমরা করব। তাদের চিকিৎসার জন্য যা যা প্রয়োজন তা আমরা করব।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এইচআইভি এইডস হয়েছে কয়েকজনের, আমি শুনেছি। আমরা যথেষ্ট সচেতন। যাদের মধ্যে এ ধরনের রোগ শনাক্ত করা হয়েছে তাদের আলাদাভাবে রাখার ব্যবস্থা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা করব। আমরা চাই না এ রোগ সব স্থানে ছড়াক। এজন্য আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। ছোট ছোট বাচ্চাদের ভ্যাকসিনও দিচ্ছি, পরিষ্কার স্থানে থাকার ব্যবস্থা করেছি। এসব স্থানে আমরা অনেকগুলো ক্যাম্পও করেছি। সব বিষয়ে আমরা সচেতন রয়েছি।