কঠোর অবস্থানে সরকার

কঠোর অবস্থানে সরকার

হরতালকে কেন্দ্র করে বোমাবাজি, ভাঙচুর ও জ্বালাও-পোড়াওয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

এ ধরণের ঘটনা ঠেকাতে আরো কঠোর অবস্থান নেয়া হবে বলে সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

সেই সঙ্গে ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় জনগণকে জিম্মি করে একের পর এক হরতাল, বোমাবাজি, প্রাণহানী, জনদুর্ভোগের রাজনৈতিকভাবে প্রতিবাদ করা হবে।

সোমবার এসব ঘটনার প্রতিবাদে সমাবেশের আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ। গরতাল বিরোধী মিছিল নিয়ে দলের কর্মীরাও মাঠে নেমেছে।

সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিএনপি নেতা ইলিয়াসের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা যে কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয় এটা যেমন তারা উপলব্ধি করছেন তেমনি তার স্ত্রী, সন্তান, পরিবার, স্বজনদের মানসিক অবস্থাও উপলব্ধি করছেন।

বিষয়টি বেদনাদায়ক ও স্পর্শকাতর হওয়ায় সরকার রাজনৈতিক কর্মসূচিতে কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। প্রথম দফায় তিন দিনের হরতালে দ’ব্যক্তির প্রাণহানিসহ ভাঙচুর আগুন লাগানোর ঘটনায় সরকার অনেকটাই নমনীয় অবস্থানে ছিলো।

হরতালে প্রথমেই বাধা দিলে মানুষের সেন্টিমেন্ট সরকারের বিপক্ষে চলে যাবে- এ বিবেচনায় এ ধরনের অবস্থান নেয়া হয় বলে তারা ‍জানান।

কিন্তু দ্বিতীয় দফা হরতালের প্রথম দিনে রোববার হরতাল চলাকালে সচিবালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনেসহ বেশ কিছু স্থানে গাড়িতে আগুন ও ভাঙচুর করা হয়।

পরিস্থিতি আরো অবনতির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য এগুলো করা হচ্ছে বলে সরকার আশংকা করছে।

এই কারণেই সরকার বাধ্য হয়ে সতর্ক ও কঠোর অবস্থানে চলে গেছে বলে তারা বাংলানিউজকে জানান।

সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য আন্দোলনের ইস্যু তৈরি করতে বিরোধী দল বিএনপি নিজেরাই ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আওয়ামী লীগ প্রথমে অভিযোগ করলেও পরে এই অবস্থান থেকে সরে আসে।

গত ১৮ এপ্রিল রাতে ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর ১৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ইস্যুতে কথা বলেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এখন পর্যন্ত আর কোনো কথা বলেননি।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইলিয়াস আলীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। সূত্রগুলো জানায়, বিষয়টি মানবিক এবং স্পর্শকাতর হওয়ায় এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে বাড়াবাড়ি হয়ে যেতে পারে এ কারণে সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে কথা বলা বন্ধ থাকে।

চার দিনের সরকারি সফর শেষে গত ২৪ এপ্রিল কাতার থেকে দেশে ফেরার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের সিনিয়র মন্ত্রী ও দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। এর পর প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর উচ্চ পদস্থ’ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

ক্ষমতাসীন দলের মুখপাত্র আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গত ২৬ এপ্রিল প্রথম বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন।

আশরাফ সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, “ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারই সরকারের একমাত্র ‘প্রায়োরিটি, নাথিং এলস’। আশা করি অচিরেই তিনি জীবিত অবস্থায় আমাদের সামনে আসবেন।”

তিনি বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আর হরতাল দিয়ে দেশের মানুষকে জিম্মি করবেন না। সারা দেশের মানুষ এই নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তাদেরকে হয়রানি থেকে মুক্তি দিন। প্রধানমন্ত্রী আইন-শৃংখলা বাহিনীকে  নির্দেশ দিয়েছেন, ‘আমি ইলিয়াস আলীকে জীবিত অবস্থায় ফেরত চাই। তাকে জীবিত দেখতে চাই’।”

তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই। তাকে নিয়ে আমরা রাজনীতি-রাজনীতি খেলা চাইনি। প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব সরকারের। আমরা সেই দায়িত্বের কথা ভুলে যাইনি। ইলিয়াস আলী এ দেশের একজন নাগরিক, সন্তানের পিতা এবং একজন মহিলার স্বামী। স্বজন নিখোঁজ হলে পরিবারের অবস্থা কী হয় আমরা তা প্রত্যেকেই অনুভব করি। একজন নিখোঁজ হওয়ার জন্য ৪ জন লোকা মারা গেছে তারা কী নিখোঁজ হওয়ার জন্য দায়ি?’

এরপর দ্বিতীয় দফায় দুই দিনের হরতাল শুরু হয় রোববার থেকে। সোমবারের হরতালের পর মঙ্গলবার বিরতি দিয়ে বুধ ও বৃহস্পতিবার পুনরায় হরতালের হুমকি দিয়েছে বিএনপি।

গত সপ্তাহে তিন দিনের হরতাল করা হলেও বিএনপির কর্মীরা তেমন একটা মাঠে ছিলো না। কিš‘ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ২৮ এপ্রিলের মধ্যে ইলিয়াসকে ফেরত দেয়া না হলে সারাদেশে আগুন জ্বলবে। সে আগুন সরকার নিভাতে পারবে না। এরপর রোববারের হরতালে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে দফায় দফায় বোমাবাজি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

বিএনপি নেতাদের উস্কানিমুলক বক্তব্যের কারণেই পরিস্থা’তি অবনতির দিকে যাচ্ছে বলে সরকারের নীতি নির্ধারকরা মনে করছেন।

এ কারণেই সরকার আরো কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে বলে তারা জানিয়েছেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকেও কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে জানা গেছে। তবে এ ব্যাপারে কেউ প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাচ্ছেন না।

তবে বিএনপির হরতাল প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া একটি গণতান্ত্রিক সরকারের দায়িত্ব। সে অনুযায়ীই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।

এদিকে, বিএনপির ডাকা হরতালে বোমাবাজি, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রতিবাদে সোমবার বিকেল ৪টায় প্রতিবাদ সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ।

বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

প্রতিবাদ সমাবেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন।

রাজনীতি