নির্বাচনের আগে নছিমন-ভটভটির বিরুদ্ধে অভিযান শিথিল

নির্বাচনের আগে নছিমন-ভটভটির বিরুদ্ধে অভিযান শিথিল

নছিমন, করিমন ও ভটভটির মতো অবৈধ যান সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। তারপরও ভোটের আশায় নির্বাচনের আগে এসবের বিরুদ্ধে অভিযান শিথিল করা হয়েছে।

দুর্ঘটনা অর্ধেকে কমিয়ে আনতে সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের এক সভায় ‘ন্যাশনাল রোড সেফটি স্ট্র্যাটিজিক অ্যাকশন প্ল্যান’ অনুমোদন করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ কথা জানান।

রোববার রাজধানীর রমনার একটি হোটেলে কাউন্সিলের ওই ২৫তম সভায় আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে বহুল আলোচিত ‘এপেল লোড নীতিমালা-২০১২’ কার্যকরের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

একই সঙ্গে মালিকদের দাবির মুখে পণ্যবাহী পরিবহনে ওজন সীমা বাড়িয়েছে সরকার। কাউন্সিলের সভায় দেওয়া অনুমতি অনুযায়ী, এখন থেকে ছয় চাকার (দুই এপেল) ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানে ২২ টন এবং প্রাইম মুভারে (চার এপেল) ৪২ টন পর্যন্ত পরিবহন করা যাবে।

২০১৫ সালের ১ আগস্ট জাতীয় মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল নিষিদ্ধ করে সরকার। তারও আগে ২০১১ সালে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়। শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নছিমন, করিমন ও ভটভটি সড়কে চলাচল বন্ধ করতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু রোববার কাউন্সিলের সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল বলেছেন, এসব যানবাহন বন্ধ করলে ভোটের রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। নির্বাচনের আগে অবৈধ যান চলাচল বন্ধে অভিযান চলবে না।

সভায় উপস্থিত নৌমন্ত্রী শাজাহান খান এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাও সড়ক পরিবহনমন্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন করেন।

তবে কাউন্সিলের সদস্য কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন, রাজনীতিতে দলীয় স্বার্থ প্রাধান্য পায়, কিন্তু জনগণের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে হতে পারে না। অবৈধ যানবাহন বন্ধের সিদ্ধান্ত এখন নেওয়া না গেলে, নির্বাচনে জয়ী হয়েও নেওয়া যাবে না। সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

কাউন্সিলে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান বলেন, নছিমন, করিমন ও ভটভটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে স্থানীয় পর্যায়ে অসন্তোষ দেখা দেয়। কারণ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্বল্প দূরত্বে চলাচলের জন্য বিকল্প যানবাহন নেই। বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়া বন্ধ করা জুলুম।

এ বক্তব্যের পর সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, স্বল্প দূরত্বের পথে হিউম্যান হলার অনুমোদন দেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। কিন্তু এখনও সুরাহা হয়নি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, নছিমন, করিমন, ভটভটি ও মাহেন্দ্র ছত্রাকের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এসব বন্ধে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, সামনে নির্বাচনী মৌসুম। এসব যানবাহন বন্ধ করা হলে মানুষ বলতে শুরু করবে, সরকার সারা বছর কিছু করলো না; নির্বাচনের আগে বন্ধ করলো। আবার বিরোধী পক্ষ বলবে, সরকার গরীব মানুষের পেটে লাথি মেরেছে।

অবৈধ যান চলাচল বন্ধ না করতে এমপিদেরও চাপ রয়েছে বলে জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই বলা শুরু করেছেন নির্বাচনের আগে বিপদে ফেলবেন না। এমপিদের বক্তব্যের বরাতে তিনি জানান, অবৈধ যান চলাচল বন্ধ করলে চালকরা হঠাৎ বেকার হয়ে পড়বেন। এতে ভোটের রাজনীতি কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। চালক-শ্রমিকদের সমর্থন হারাতে পারে ক্ষমতাসীন দল।

আগামী নির্বাচনের পর অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পরিকল্পনার কথা জানান সড়ক পরিবহনমন্ত্রী। তিনি বলেন, নির্বাচনের বছরে এগুলো এখন বন্ধ করা কঠিন। জনপ্রতিনিধিরা বন্ধ করতে দেবেন না। বাস্তবতা বুঝতে হবে। আপাতত সম্ভব নয়। তাই ভোট শেষ করে সরকার গঠন করা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে সচেতনতা ও কাউন্সিলিং বাড়াতে হবে।

বাংলাদেশ