বিপিএলে প্রতিবছর কোনো না কোনো নতুন নতুন ইস্যু তৈরি হয়। এবার বিদেশি ক্রিকেটার কোটা বাড়ানো নিয়ে কি হৈ চৈ’ই না হলো। প্রতি ম্যাচে চারজনের বদলে একজন বাড়িয়ে পাঁচ বিদেশি খেলানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে চারদিকে উঠেছিল সমালোচনার ঝড় ।
বলা হলো, এক ম্যাচে চারজন বিদেশিই ঠিক ছিল। তা বাড়িয়ে পাঁচজন করায় দেশি ক্রিকেটারদের সুযোগ কমে গেল। দেশের ক্রিকেট উন্নয়নের কথা ভেবেই নাকি বিপিএল, সেখানে যদি দেশের ক্রিকেটাররাই কম সুযোগ পান, তাহলে কি করে হবে? সে কথা অযৌক্তিক, তার কোনই যথার্থতা নেই তা নয়। কথায় যুক্তি ছিল যথেষ্ঠই।
কিন্তু সে যুক্তি খণ্ডনের দায় দায়িত্বও ছিল স্থানীয় বা দেশের ক্রিকেটারদের। তারা ভালো পারফরম করলে, ব্যাট ও বল হাতে আলো ছড়ালে বলা যেত, সত্যিই তো দেশের ক্রিকেটাররা তো ভালোই খেলছে। তাহলে আর বিদেশি ক্রিকেটারের কোটা বাড়ানো কেন?
কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। সিলেটে প্রথম দু’দিন হওয়া চার খেলায় বিদেশিদের একচ্ছত্র প্রাধান্য। তাদের নৈপুণ্যের দ্যুতিতে ম্লান স্থানীয় ক্রিকেটাররা। প্রথম দু’দিন বিদেশি ক্রিকেটারদের দাপট সুস্পষ্ট। নজরকাড়া পারফরমেন্স আর ম্যাচ নির্ধারণই ভূমিকায়ও ঘুরে ফিরে বিদেশিরাই।
এ ক’দিনে চিটাগাং ভাইকিংস ছাড়া সব দলই অন্তত এক ম্যাচ খেলে ফেলেছে। এর মধ্যে চ্যাম্পিয়ন ঢাকা ডায়নামাইটস আর স্বাগতিক সিলেট সিক্সার্স খেলেছে দুটি করে ম্যাচ। কিন্তু একটি ম্যাচেও একজন বাংলাদেশি ক্রিকেটারের উল্লেখ করার মত পারফরমেন্স নেই। কারো ব্যাট থেকে একটি হাফ-সেঞ্চুরি হাকাতে পারেননি কেউ। বোলাররা সে তুলনায় খানিক উজ্জ্বল। কেউ ৪ কিংবা ৫ উইকেট দখল করতে না পারলেও গড়পড়তা ২-৩ উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন বেশ কজন বোলার। এখন পর্যন্ত এক ম্যাচে তিন উইকেট পাওয়া ও সেরা বোলিং স্পেলটি বাংলাদেশের মিডিয়াম পেসার আবু হায়দার রনির। ৫ নভেম্বর খুলনা টাইটান্সের সাথে ১৩ রানে ৩ উইকেট দখল করেছেন ঢাকা ডায়নামাইটসের এ বাঁহাতি পেসার।
কিন্তু ব্যাটসম্যানদের পারফরমেন্স বেশ খারাপ। জাতীয় পর্যায়ের উইলোবাজদের মধ্যে ওপেনার তামিম ইকবাল গ্রোয়েন ইনজুরি কাটিয়ে মাঠে নামতে পারেননি। আরেক বাঁহাতি ওপেনার সৌম্য সরকারের দল চিটাগাং ভাইকিংসও এখন পর্যন্ত কোন ম্যাচ খেলেনি। আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সাথে প্রথম মাঠে নামবে সৌম্যর চিটাগাং ভাইকিংস।
কিন্তু লিটন দাস (এক খেলায় ২১), ইমরুল কায়েস (এক ম্যাচে ১১), সাব্বির রহমান রুম্মন (দুই ম্যাচে ৫), মুশফিকুর রহীম (এক ম্যাচে ১১), সাকিব আল হাসান (দুই ম্যাচে ২৪), মাহমুদউল্লাহ (এক ম্যাচে ৪ ), মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (দুই ম্যাচে ১৬) ও নাসির হোসেনের (দুই ম্যাচে ১৮), মুমিনুল হক (এক ম্যাচে ৯), শুভগত হোম (দুই খেলায় ৭), মেহেদী হাসান মিরাজ (এক খেলায় ১৫) নাজমুল হোসেন শান্ত (এক ম্যাচে ৫) সাইফুদ্দিনের (এক ম্যাচে ১*) মত জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তোলা ব্যাটসম্যানদের একজনও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। এদের কেউ তিরিশের ঘরেও যেতে পারেননি।
এখন পর্যন্ত দেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে রান করেছেন মাত্র তিনজন। রাজশাহী কিংসের রনি তালুকদার ( রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ৩৮ বলে ৪৭) , মোহাম্মদ মিঠুন ( রংপুর রাইডার্সের হয়ে রাজশাহী কিংসের বিরুদ্ধে ৩৩ বলে ৪৬) আর শাহরিয়ার নাফীস (৩৪ বলে ৩৫)। এই তিনজনেরই ফিফটি করার সুযোগ ছিল। কিন্তু সবাই একটা পর্যায়ে গিয়ে নিজের ভুলে সুযোগ হাতছাড়া করেছেন।
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ঘরের মাঠে স্লো উইকেটে রান পেতে কষ্ট করলেও বিদেশী টপ অর্ডারের বেশ কজন শুরু থেকেই স্বচ্ছন্দে খেলছেন। শ্রীলঙ্কার উপল থারাঙ্গার ব্যাট সবচেয়ে সাবলীল। সিলেট সিক্সার্সের এ লঙ্কান ওপেনার দু ম্যাচে জোড়া হাফ সেঞ্চুরি উপহার দিয়ে এখন পর্যন্ত (৫১+৬৯*) = ১২০ রান করে টপ স্কোরার। এছাড়া এ কন্ডিশনে অনভ্যস্ত ব্যাট হাতে আলো ছড়াচ্ছেন সিলেট সিক্সার্সের ক্যারিবীয় ওপেনার আন্দ্রে ফ্লেচার ( দুই খেলায় ৯৯)। আরেক ক্যারিবীয় এভিন লুইসের (২৬+৬৬) ৯২ ব্যাটেও রান আসছে নিয়মিত।
ঢাকা ডায়নামাইটসের দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান ক্যামেরন ডেলপোর্টও (২০*+৬৪) রান পাচ্ছেন। ওয়েষ্ট ইন্ডিজের মারলন স্যামুয়েলস কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে প্রথম খেলায় জিতাতে না পারলেও দলের টপ স্কোরার (৬০)। এছাড়া ঢাকার হয়ে কুমারা সাঙ্গাকারাও (২০+৩২ = ৫২) মোটামুটি রান পেয়েছেন।
তবে ব্যাটসম্যানদের তুলনায় স্থানীয় বোলাররা বিশেষ করে স্পিনাররা ভালো করছেন। বিশেষজ্ঞদের মত সেটা যতটা তাদের বোলিং দক্ষতা, কারুকাজ ও কারিশমায়, তার চেয়ে বেশি উইকেটের মন্থর গতি ও নিচু বাউন্সের কারণে। সে কারনেই স্পিনাররা তুলনামূলক ভালো বল করছেন। সিলেট সিক্সার্স অধিনায়ক নাসিরের (দুই খেলায় ৮ ওভারে ৩৯ রানে তিন উইকেট), তাইজুল ( দুই খেলায় ৫ ওভার ২৭ রান দিয়ে ২ উইকেট), সাকিব আল হাসান ( দুই ম্যাচে ৬ ওভারে ২/৪৮)।
বাংলাদেশের পেসারদের মধ্যে যারা বাড়তি গতি সঞ্চারের পাশাপাশি বেশি কিছু করতে চান, তারা সবাই মানে শফিউল, রুবেলরা সুবিধা করতে পারেননি। তবে অযথা জোরে বল করা এবং খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা না চালিয়ে মাথা খাটিয়ে বল করা অভিজ্ঞ মাশরাফি (এক ম্যাচে ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে ১ উইকেট) এবং তরুন আবু হায়দার রনি ( দুই খেলায় ৬ ওভারে ৪০ রানে ৩ উইকেট) ঠিকই সফল।
এদিকে একদিন বিরতির পর আজ (মঙ্গলবার) আবার মাঠে গড়াবে বিপিএল। দেখা যাক তৃতীয় দিনের মাথায় এসে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা রানে ফেরেন কি না? আর স্থানীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে প্রথম হাফ সেঞ্চুরি করেন কে?