পাকিস্তান হাইকমিশনের ওয়েবপেজে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা ঘোষণা নিয়ে বিকৃত ভিডিও প্রচার করার ঘটনায় ঢাকাস্থ পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে ইসলামাবাদকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার ঢাকাস্থ পাকিস্তান হাইকমিশনের ফেসবুক পাতায় পোস্ট করা এই অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তিকর ভিডিওটির জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার এবং এটি ফেসবুক থেকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করার দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, সচিব (দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কিত) কামরুল আহসান ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশনার রফিউজ্জামান সিদ্দিকীকে মঙ্গলবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে তার হাতে একটি ‘কড়া প্রতিবাদলিপি’ ধরিয়ে দেন।
আহসান পরে সাংবাদিকদের জানান, পাকিস্তানের হাইকমিশনার ভিডিওটি পোস্ট করার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং বলেন, ‘এটি কোন উদ্দেশ্যমূলক কাজ ছিল না।’
ব্যাপক প্রতিবাদের আগেই হাইকমিশন ওয়েবসাইট থেকে এই পোস্টটি সরিয়ে নেয়।
বিবৃতিতে আহসানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, তিনি পাকিস্তানের কূটনীতিককে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সরকার গভীর দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, পাকিস্তান ও তার বিভিন্ন সংস্থা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বারবার হীন অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে সতর্ক করে বলেছে, পাকিস্তান এভাবে কূটনৈতিক শিষ্টাচার ভঙ্গ করলে দুই দেশের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
কূটনৈতিক এই প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, প্রচারিত ওই ভিডিওতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি বলে যা বলা হয়েছে তা একটি জঘণ্যতম মিথ্যাচার এবং ঐতিহাসিক সত্যের বিকৃতি।’
ওই ভিডিওতে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি, তিনি স্বায়ত্বশাসন চেয়েছিলেন বলে মিথ্যাচার করা হয়েছে।
‘বাংলাদেশ সরকার এমন ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক বর্ণনায় তীব্র প্রতিবাদ করছে’ উল্লেখ করে প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়, ‘পাকিস্তান বা পাকিস্তানের যে কোন অংশ থেকে এমন বিভ্রান্তিমূলক আচরণ স্বাভাবিক পরিস্থিতির জন্য হুমকিস্বরুপ।’
আহসান বলেন, ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশন থেকে সামাজিক মাধ্যমে উদ্দেশ্যমূলকভাবে যে অপপ্রচার চালিয়েছে তা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের সম্পূর্ন পরিপন্থী।
প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি বা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অন্য কারো দ্বারা ঘোষিত হয়েছে বলাটা সত্যের অপলাপ ছাড়া আর কিছু নয়।’
পররাষ্ট্র সচিব পাকিস্তানি হাই কমিশনারকে স্মরণ করিয়ে দেন যে বঙ্গবন্ধু তাঁর ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এই ভাষণ বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য তাঁর অভিপ্রায়ের সাক্ষ্য বহন করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, হাইকমিশনারকে এও স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় যে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বধীনতার ঘোষণা এবং পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের দীর্ঘ দিনের স্বাধীনতা আন্দোলন চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে।
অপর দিকে প্রতিবাদ লিপিতে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা এবং একটি নৃশংস সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেয়ার জন্য তাঁর উদাত্ত আহ্বান বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের একটি মাইলফলক, যা লাখ-লাখ মুক্তিযোদ্ধাকে দেশকে মুক্ত করার লড়াই করতে উদ্বুদ্ধ করেছিলো।
বিবৃতিতে বলা হয়, এমনকি পাকিস্তানের কিছু ইতিহাসবিদও তাদের লেখায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অনন্য ও বিশাল ভূমিকার কথা তুলে ধরেছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এমন চরম কূটনৈতিক শিষ্ঠাচার বহির্ভূত আচরণ বাংলাদেশের জনগণ বিশেষ করে ত্রিশ লাখ শহীদের পরিবার ও প্রায় পাঁচ লাখ ধর্ষিতা নারীর অনুভূতিকে আহত করে।
এতে বলা হয়, প্রতিষ্ঠিত কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে চলার স্বার্থে ঢাকাস্থ পাকিস্তান হাইকমিশন এবং পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের অবশ্যই দায়িত্বশীল আচরণ করা এবং বাংলাদেশের স্বার্থপরপিন্থী এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ও উসকানিমূলক কর্মকা- থেকে বিরত থাকা উচিত।
পরে, পাকিস্তান হাইকমিশনারকে বিষয়টি পাকিস্তানের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গোচরীভূত করতেও বলা হয়।