পাকিস্তান হাই কমিশনের ফেইসবুক পেইজ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করে একটি ভিডিও প্রচারের প্রেক্ষাপটে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় ঢাকা প্রস্তুত।
আজ মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলার জন্য আমরা তৈরি। ষড়যন্ত্র করে কোনো লাভ হবে না।’
একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে ইউনেস্কোর ‘মেমোরি অফ দা ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ যুক্ত হওয়ায় এ সংবাদ সম্মেলনে আসেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে একটি স্বাভাবিক সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেছিলেন, যুদ্ধের সময়ও কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকে। আর আমরা চাইছি স্বাভাবিক সম্পর্কটা (পাকিস্তানের সঙ্গে) গড়ে উঠুক। ব্যবসা বাণিজ্য হোক।’
তিনি আরও বলেন, দুই দেশের পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈঠক দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে। সরকার চায়, সেই বৈঠক হোক, যেখানে দুই দেশ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে পারবে।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ওই তালিকায় অন্তর্ভুক্তির সম্ভাব্যতা যাচাই করতে গত বছর ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘ যাচাই-বাছাই শেষে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপর্ণূ দালিলিক ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। এর মাধ্যমে বিশ্ব বঙ্গবন্ধুর অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামে তার অবিসংবাদিত ভূমিকার বিষয়টি আরও বিশদভাবে জানার সুযোগ পাবে।’
‘এই ভাষণ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বাঙালি জাতি এবং সমস্ত মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণার অনন্য উৎস হয়ে প্রেরণা যোগাবে।’-যোগ করেন তিনি।
সম্প্রতি পাকিস্তান অ্যাফেয়ার্স নামে একটি ফেইসবুক পেইজ থেকে ১৩ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়, যেখানে বলা হয়, ‘শেখ মুজিবুর রহমান নন, জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক। আর বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর তাজউদ্দীন আহমেদ এ ব্যাপারে তখনকার মেজর জিয়াকে সমর্থন দেন।’
ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশন গত বৃহস্পতিবার তাদের ফেইসবুক পেইজে ওই ভিডিও শেয়ার করলে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রে খবর আসে। পরে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হলে হাই কমিশনের ফেইসবুক পেইজ থেকে ভিডিওটি সরিয়ে ফেলা হয়।
এই প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার পাকিস্তানের হাই কমিশনার রফিউজ্জামান সিদ্দিকীকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়। পকিস্তানের এ ধরনের প্রবণতা দুই দেশের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলেও সতর্ক করে দেওয়া হয় তাকে।
১৯৭১ সালে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়। সেই মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর এ দেশীয় দোসরেরা যেসব যুদ্ধাপরাধ ঘটিয়েছিল, তার বিচার শুরুর পর গত আট বছরে নানাভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ইসলামাবাদ।