বাংলাদেশ-ভারত যৌথ পরামর্শক কমিশনের বৈঠকে অংশ নিতে আজ রবিবার ঢাকা আসছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। ২৪ ঘণ্টার ঝটিকা এই সফরে তিনি যৌথ পরামর্শক কমিশনের বৈঠকে অংশ নেওয়া ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
এ ছাড়া তিনি ঢাকায় ভারতের ঋণ সহায়তায় গৃহীত ১৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভারতীয় হাইকমিশনের নতুন চ্যান্সেরি ভবনেরও উদ্বোধন করবেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গেও তার সাক্ষাতের কথা রয়েছে।
সংশ্নিষ্ট কূটনৈতিক ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এবারের যৌথ পরামর্শক কমিশনের বৈঠকের আলোচনায় দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্নিষ্ট বিষয়গুলো ছাড়াও রোহিঙ্গা সংকট বিশেষ গুরুত্ব পাবে। দ্বিপক্ষীয় স্বার্থের আলোচনায় ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর ও চলতি বছর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময়কার স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলো বাস্তবায়নের বিষয় প্রাধান্য পাবে। এর পাশাপাশি তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়েও বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করা হবে।
বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় যৌথ পরামর্শক কমিশন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ফোরাম।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, আজ রবিবার দুপুরে সুষমা স্বরাজ ঢাকায় পৌঁছবেন। বিমানবন্দর থেকে তিনি সরাসরি যাবেন হোটেলে। বিকেলে হোটেল সোনারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ পরামর্শক কমিশনের বৈঠক। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও ভারতের পক্ষে সুষমা স্বরাজ।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারত তার নিজস্ব প্রক্রিয়ায় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বলপ্রয়োগের কারণে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার উপস্থিতি বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার জন্য কতটা প্রবল সংকট তৈরি করছে সে বিষয়টিও এরইমধ্যে ভারত জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলেছে। এ সংকট সমাধানে কীভাবে নেপথ্যে সমন্বিত কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো যায়, সে বিষয় নিয়েও যৌথ পরামর্শক কমিশনের বৈঠকে আলোচনা হবে। পাশাপাশি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তার প্রসঙ্গটিও আলোচনায় আসবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা সংকটের শুরু থেকে এর দ্রুত সমাধানে কূটনৈতিক তৎপরতার অংশ হিসেবে ভারতের সঙ্গে নানা পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। যৌথ পরামর্শক কমিশনের বৈঠকের আলোচনাতেও গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্যসূচি হিসেবে রোহিঙ্গা সংকট স্থান পাবে।
সূত্রের প্রত্যাশা, এ আলোচনায় রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ভারতের সক্রিয় ইতিবাচক ভূমিকার ক্ষেত্রে আরও অগ্রগতি হবে। দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় যৌথ সীমান্ত নিরাপত্তা, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সংশ্নিষ্ট বিষয় এবং তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয় থাকবে। এর বাইরে ভারতের ঋণ সহায়তায় নেওয়া প্রকল্পগুলোর অগ্রগতির বিষয়ে আলোচনা হবে। নতুন বিনিয়োগ ও ঋণ সহায়তার বিষয়গুলোও থাকবে আলোচনায়। সূত্র জানায়, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির প্রসঙ্গটি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তোলা হবে। এ চুক্তির ব্যাপারে ঢাকা সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দিলেও তা এখনও ঝুলে আছে।
দিল্লি থেকে সমকালের প্রতিনিধি গৌতম লাহিড়ী জানান, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঢাকায় সুষমা স্বরাজের সফর ও যৌথ পরামর্শক কমিশনের বৈঠকের মধ্যদিয়ে উভয় দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও প্রসারিত হবে এবং বাণিজ্য, লগ্নি, নিরাপত্তা, কানেকটিভিটি, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, পানি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, জাহাজ পরিবহন, উন্নয়নমূলক প্রকল্প, পরমাণু সহযোগিতা, শিল্প-সংস্কৃতি এবং জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক আরও উন্নত ও সুনির্দিষ্ট হবে। বৈঠকে তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা হলেও এ ব্যাপারে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত হচ্ছে না।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানিয়েছে, ঢাকা বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলোর পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি আঞ্চলিক সমস্যা হিসেবে প্রাধান্য দিয়ে আলোচনা করা হবে।
অপর একটি সূত্র জানায়, চীনের ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ নীতির ক্ষেত্রে দুই দেশের নিজস্ব অবস্থানের প্রসঙ্গটিও আলোচনায় উঠবে। এক্ষেত্রে দুই দেশের যৌথ স্বার্থ রক্ষা ও সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও দৃঢ় করার ব্যাপারে সমন্বিত কৌশলগত অবস্থানও নির্ধারণ করা হবে।
এদিকে, গত শনিবার টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান সম্পৃক্ততার পরিপ্রেক্ষিতে নরেন্দ্র মোদি সরকারের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতিতে আঞ্চলিক অংশীদার হিসেবে সর্বাধিক গুরুত্বের তালিকায় এক নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশ। বিদেশি রাষ্ট্রের জন্য ঋণের ক্ষেত্রে ভারতের সর্বোচ্চ ঋণ সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে সংশ্নিষ্ট কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বার্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পৌঁছে দেবেন সুষমা স্বরাজ। একই সঙ্গে দুই দেশের ঐতিহাসিক দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার সম্পর্ক আরও দৃঢ় ও সম্প্রসারণের বিষয় নিয়েও তারা আলোচনা করবেন।
আগামীকাল সোমবার সুষমা স্বরাজের ঢাকা ত্যাগের আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে। এটি হবে সৌজন্য সাক্ষাৎ। সুষমা স্বরাজের সফরের তারিখ নির্ধারিত হওয়ার পরই বিএনপির পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের ব্যাপারে যোগাযোগ করা হয়।
২৪ ঘণ্টার সফর শেষে সোমবার বিকেলে দিল্লি ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে সুষমা স্বরাজের।