চীনের নিম্নমানের সোলার প্যানেল: ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশীয় শিল্প

চীনের নিম্নমানের সোলার প্যানেল: ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশীয় শিল্প

চীন থেকে আমদানি করা সৌর প্যানেলে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। আমেরিকার অ্যান্টি ডাম্পিং আইনের কারণে চীনের তৈরিকৃত সৌরপ্যানেলের ডাম্পিং গ্রাউন্ড এখন বাংলাদেশ। তাই সরকারকে এখনই সচেতন হতে হবে এবং দেশীয় প্রস্তুতকারকদের সহায়তা দানের মাধ্যমে এদেশীয় শিল্পকে শক্তিশালী করতে হবে।

শনিবার গুলশানের ইস্ট কোস্ট সেন্টারে জাতীয় দৈনিকসহ অন্যান্য মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্যারাসল এনার্জি লি., গ্রিনফিনিটি এনার্জি লি., রেডিয়েন্ট অ্যালায়েন্স লি., ইলেক্ট্রো সোলার, আভা রিনিউয়েবল এনার্জি লি. এবং সৌর বাংলা লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকগণ এ দাবি জানান।

প্যারাসল এনার্জির চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ইউরোপিয় স্ট্যান্ডার্ডের সোলার মডিউল তৈরি হচ্ছে। কিন্তু চীন থেকে আমদানিকৃত প্যানেলের কারণে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার বিনিয়োগ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। চীন সরকার রফতানির ক্ষেত্রে ১৭ শতাংশ হারে ইনসেনটিভ দিচ্ছে। তাছাড়া আমেরিকার অ্যান্টি ডাম্পিং নীতির কারণে তাদের জমে থাকা বিপুল পরিমাণ স্টক অত্যন্ত কম দামে বিক্রি করছে চীন। ফলে প্রতিযোগিতায় মার খাচ্ছে এদেশীয় প্রস্তুতকারকেরা।

তিনি বলেন, সৌর প্যানেলের নূন্যতম মেয়াদ ২০-২৫ বছর হলেও মাত্র দু’এক বছরের মধ্যেই চীনে তৈরি প্যানেলগুলোর কার্যক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। এমন সব কোম্পানির প্যানেল আমদানি করা হচ্ছে যাদের কোনও সার্টিফিকেটও নাই।

রেডিয়েন্ট অ্যালায়্যান্স এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানজিল চৌধুরি বলেন, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ভারত সরকার সকল প্রকার মাল্টি এবং মনো ক্রিস্টালাইন প্যানেল আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। শুধু তাই নয় ২০১৩ সালের পর সোলার সেল আমদানিও বন্ধ হয়ে যাবে। দেশীয় স্বার্থ সংরক্ষণে আমাদের দেশেও ২০১৪ সালের পর সব ধরনের সোলার প্যানেল আমদানি বন্ধ করতে হবে এবং সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পে দেশীয় প্যানেলের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য একটি কার্যকর রেগুলেটরি বডি প্রয়োজন বলেও তিনি মন্তব্য  করেন।

ইলেক্ট্রো সোলার এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আনসার উদ্দিন বলেন, যে ৬টি কোম্পানি বর্তমানে প্যানেল উৎপাদন করছে তাদের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ১০০ মেগাওয়াট। তবে বিনিয়োগ বাড়ালে উৎপাদন অনেকগুণ বাড়ানো সম্ভব। তিনি বলেন, বর্তমানে একশ’ ভাগ ডিউটি ফ্রি সুবিধায় সোলার প্যানেল আমদানি হচ্ছে অথচ প্যানেল প্রস্তুত করার জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে উচ্চ মাত্রায় শুল্ক দিতে হচ্ছে। সৌর বাংলা লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সাব্বির চৌধুরী বলেন, এসআরও তে মাত্র ১৪টি উপকরণকে শুল্কমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেম, ব্যাক শিট, ফ্রন্ট শিট, ইথাইলিন ভিনাইল এসটেট, কানেক্টর রিবন বাসবার, ফিল্ম পিভি ইত্যাদির উল্লেখ না থাকায় উচ্চহারে শুল্ক দিতে হচ্ছে। গ্লাস কভারের মাত্র একটি সাইজের উল্লেখ আছে। অন্যান্য সাইজের জন্য শুল্ক দিতে হচ্ছে।

গ্রিনফিনিটি এনার্জির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম বাকী মাসুদ বলেন, চীন থেকে আনা ৮০-১০০ ওয়াটের প্যানেলে স্টিকার বসিয়ে তা ১২০-১৫০ ওয়াটের বানানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ডিপিডিসি, ডেসকো, বিএসটিআই, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা ইডকল কারও কাছেই কোন টেস্টিং ল্যাব কিংবা ফ্যাসিলিটিজ নাই। আবাসন কোম্পানিগুলোর সাথে ডিপিডিএস, ডেসকো’র ইঞ্জিনিয়ারদের আনইথিক্যাল এগ্রিমেন্ট থাকে বলে অভিযোগ আছে। কম পয়সায় লোক দেখানো সৌর প্যানেল বসিয়ে লোড স্যাংশনের কাগজ হাতে পেলেই তাদের স্বার্থ উদ্ধার হয়ে যায়।

আভা রিনিউয়েবল এনার্জি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ.কে আজাদ বলেন, বিদ্যুত সংযোগ পেতে ভাড়া করা প্যানেলও ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এই ডিজিটাল যুগেও ডিপিডিসি, ডেসকোর কর্মকর্তারা গজ-ফিতা দিয়ে প্যানেলের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ মেপে সৌর প্যানেলের ক্যাপাসিটি নির্ধারন করছেন। এটা সত্যিই হাস্যকর!

সোলার প্যানেল প্রস্ততকারক কোম্পানির শীর্ষ ব্যক্তিরা বলেছেন, গ্রিন লোনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান জটিলতা দূর করতে হবে। কার্বন ফান্ড থেকেও সরকার সোলার প্যানেল প্রস্ততকারকদের সহায়তা করতে পারে। নবায়নযোগ্য জ্বালানী থেকে আগামী ২০১৪ সাল নাগাদ আরও ৪৫০ থেকে ৫০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুত উৎপাদন করার পরিকল্পনা নিয়েছে বিশ্বব্যাংক এবং জাইকা। কাজেই আমদানি নির্ভরশীলতা নয় দেশীয় শিল্পকে শক্তিশালী করতে হবে।

অর্থ বাণিজ্য