প্রতি বছর সারাদেশ থেকে পাঁচ লাখ মানুষ বসবাসের জন্য ঢাকায় আসে। এই শহরের লোকসংখ্যা দিন দিন বাড়লেও এখনও ঢাকার প্রতি তিনজনে একজন মানুষ মৌলিক সুযোগ-সুবিধাহীন বস্তিতে বাস করে। সারাদেশের শহরাঞ্চলের প্রায় ৬০ লাখ গৃহের সঙ্কট রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে টেকসই উন্নয়ন (এসডিজি-১১) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, পরিকল্পিত নগরায়ন এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় নগরের দরিদ্রদের আবাসন নিশ্চিত করা জরুরি।
রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত নগরের দরিদ্রদের জন্য গৃহায়নে অর্থায়ন বিষয়ক জাতীয় সম্মেলনে বিশিষ্টজনরা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের নগর উন্নয়ন কর্মসূচি দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করে। সহ-আয়োজক হিসেবে ছিল জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, নগর উন্নয়ন অধিদফতর, মিউনিসিপ্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ম্যাব), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউ অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, শহরের বেশিরভাগ গরীব বস্তিতে অবৈধভাবে বসবাস করে। যেখানে জীবনমান অত্যন্ত নিম্নমানের। বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে পর্যাপ্ত ও উপযুক্ত বাড়ির অভাব। এই বাড়ির সঙ্কট আরও বাড়বে। ২০২১ সাল নাগাদ এই সঙ্কটের পরিমাণ দাঁড়াবে ৮৫ লাখ বাড়ির। আর গ্রামে সঙ্কট হবে ৩৫ লাখ বাড়ির।
অনুষ্ঠানে নগর দরিদ্রদের আবাসন সঙ্কট মোকাবেলার লক্ষ্যে তৈরি ব্র্যাকের কমিউনিটি লিড হাউজিং মডেল, ইউএনডিপির ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের লো-ইনকাম হাউজিং মডেল তুলে ধরে আলোচনা করা হয়। দারিদ্র্যবান্ধব নগর পরিকল্পনা ও নগর দরিদ্রদের গৃহায়ন ঋণের জন্য সরকারি-বেসরকারিসহ বিভিন্ন পর্যায়ে অংশীদারিত্ব জোরদারকরণ এবং মেয়র ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ নগর উন্নয়ন সংশ্লিষ্টদের সম্পৃক্তকরণের লক্ষ্যে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সম্মেলনে দেশের সবগুলো সিটি কর্পোরেশনসহ প্রায় ৭৫ জন পৌর মেয়র এবং ইউএনডিপি ও বেসরকারি সংস্থা, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পর্যায়ের আরও তিন শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন।
ব্র্যাকের স্ট্রাটেজি, কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট কর্মসূচির ঊর্ধ্বতন পরিচালক আসিফ সালেহের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, রাজশাহীর মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, কুমিল্লার মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, বরিশালের মেয়র আহসান হাবিব কামাল।
আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের জেনারেল সেক্রেটারি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আক্তার মাহমুদ, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. সুলতান হাফিজ, মিউনিসিপ্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আলহাজ মোহাম্মদ আব্দুল বাতেন, আরবান ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টরের পরিচালক ড. খুরশীদ জাবিন হোসেন তৌফিক এবং ন্যাশনাল হাউজিং অথরিটির চেয়ারম্যান এবং অতিরিক্ত সচিব খন্দকার আখতারুজ্জামান।
গৃহায়ন মন্ত্রী বলেন, অপরিকল্পিত বাড়ি নির্মাণ ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রতিদিন ২৩৫ হেক্টর ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়।
এজন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যেখানেই বাড়ি হবে। সেটা জন্য অনুমতি লাগবে। অনুমতি ছাড়া বাড়ি নির্মাণ কোনভাবেই করা যাবে না। এ সংক্রান্ত নগর অঞ্চল পরিকল্পনা আইন শিগগিরই বাস্তবায়ন হবে।
বস্তিবাসীদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার ৭ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ করেছে, আরও ১০ হাজার বাড়ি নির্মাণ করবে।
সাঈদ খোকন বলেন, দ্রুত নগরায়ন, ত্রুটিপূর্ণ পরিকল্পনা, জমির অপ্রতুলতার কারণে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরগুলোতে স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ বাসস্থান গড়া আমাদের জন্য এই সময়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি পরিকল্পিত আবাসন নির্মাণে ব্র্যাকসহ নগরীতে পরিকল্পিত আবাসন গড়তে ও আবাসন সঙ্কট মোকাবেলায় ছোট টিনের আবাসনের পরিবর্তে উঁচু ভবন নির্মাণের তাগিদ দেন।
তিনি বলেন, ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে নদী ভাঙন, দারিদ্র্য ও জীবন জীবিকার তাগিদে মানুষ যেভাবে ছুটে আসছে তাতে টিনের ঘর দিয়ে নগরীর আবাসন সমস্যা মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। এজন্য ২০০ পরিবারকে মডেল হিসেবে ধরে টোকিও, সিঙ্গাপুর ও কোরিয়ার আদলে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, হাউজিং কোম্পানি, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ (রাজউক) সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে সমন্বয় করে আবাসিক ভবন গড়ে তোলা যেতে পারে।