বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ভাবগম্ভীর পরিবেশে আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শোক দিবস পালিত হয়েছে।
১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর রাতে জগণ্নাথ হলের টিভি রুমের ছাদ ধসে ৪০জন ছাত্র, কর্মচারী ও অতিথির অকাল মৃত্যু হয়েছে, আহত হয় তিন শতাধিক।
মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য প্রতি বছর দিবসটি পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হল ও প্রধান প্রধান ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা অর্ধনমিত রাখা ও কালো ব্যাজ ধারণ করা হয়। সকাল সাড়ে ৭টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে শোক র্যালী সহকারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারিবৃন্দ জগণ্নাথ হল স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও নীরবতা পালন করেন।
পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে অক্টোবর স্মৃতি ভবনস্থ টিভি কক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ, জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. অসীম সরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রঞ্জন কর্মকার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সেই সময় নিহত শিক্ষার্থী তুষার কান্তি দাসের মা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ, প্রাধ্যক্ষবৃন্দ, তৎকালীন নেতৃবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকতা-কর্মচারী ও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ১৫ অক্টোবরের নিহতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, মানবিকতার ডাকে সাড়া দিয়ে সেদিন সবাই এসেছিল উদ্ধার কাজে। ঢাকা শহরের সকল প্রান্ত থেকে মানুষের ঢল নেমেছিল। এই দিবসের তাৎপর্য ও গুরুত্ব যদি আমরা অনুধাবন করতে চাই তাহলে শিক্ষার্থীরাই হবে তার প্রধান বাহক।
তিনি বলেন, তৎকালীন সময়ে যে সাম্প্রদায়িক অগণতান্ত্রিক সরকার ছিল তাদের অবস্থান ছিল মানবতাবাদী চেতনার বিপরীতে। মনে রাখতে হবে, তখনকার বঙ্গবন্ধু বিহীন বাংলাদেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এদেশে এই ধরনের ঘটনা যে একটি মাত্র ঘটেছে বেশি ঘটেনি, এটি আমাদের সৌভাগ্য।
উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনেকগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং ইতোমধ্যেই অনেকগুলো অপসারণ করা হয়েছে। ১৯৮৫ সালের ১৫ই অক্টোবরের মতো আর কোন ঘটনা যাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে না ঘটে এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, আমরা চাই না কোনভাবেই এ ধরণের ঘটনা ঘটুক।
এছাড়াও, শোক দিবসের কর্মসূচির অংশ হিসেবে জগণ্নাথ হল প্রাঙ্গণে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনা সভা, নিহতদের তৈলচিত্র ও তৎসম্পর্কিত দ্রব্যাদি প্রদর্শন এবং বাদ আছর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদসহ সকল হল মসজিদে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। সকালে জগণ্নাথ হল প্রাঙ্গণে রক্তদান কর্মসূচি। সন্ধ্যায় জগণ্নাথ হল উপাসনালয়ে ভক্তিমূলক গানের অনুষ্ঠান, শোক সঙ্গীত ও কবিতা আবৃত্তিসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
এছাড়া অক্টোবর মাসজুড়ে আয়োজন থাকবে ‘অক্টোবর স্মৃতি রচনা প্রতিযোগিতা’ ও শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে ‘অক্টোবর স্মৃতি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা’।