উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে : রাষ্ট্রপতি

উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে : রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে বেগবান করার জন্য জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে দল-মত নির্বিশেষে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি সোমবার জেলার বাজিতপুর কলেজের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেন,‘ কোন একক ব্যক্তি বা গোষ্টি বা কোন দলীয় স্বার্থে যাতে জাতীয় স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে সবাইকে মনোযোগ দিতে হবে’।
বিভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শের কথা তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, গণতন্ত্র চর্চার অংশ হিসেবে একটি দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিশ্বাস ও মতাদর্শ বিভিন্ন রকম থাকতেই পারে, কিন্তু দেশ ও জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সকলেরই একই লক্ষ্য হওয়া উচিত ।
আবদুল হামিদ বলেন, ‘দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য স্থিতিশীলতা অত্যন্ত জরুরী। কারণ স্থিতিশীলতা দেশের অগ্রগতিকে গতিশীল করে। অন্যদিকে অস্থিতিশীলতার কারণে প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সাধারণ মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণে সমাজের প্রতিটি স্তর থেকে দুর্নীতি দূর করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এ লক্ষ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাস্তবায়নে তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
হামিদ শিক্ষার্থীদের দেশের অমিত সম্ভাবনাময় সম্পদ হিসেব উল্লেখ করে বলেন, ‘তোমরা দুর্নীতিকে মনে প্রাণে ঘৃনা করবে এবং সমাজ থেকে দূর্নীতির চর্চা সমুলে উৎখাত করতে হবে।
তিনি বলেন,সহ¯্রাব্দের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিক্ষার্থীদের বিশ্ব মানের নাগকির হিসেবে গড়ে উঠতে হবে।
আবদুল হামিদ বলেন, শিক্ষার্থীদের পুরাতন ধ্যান-ধারনাকে বাদ দিয়ে নতুন ও সময়োপযোগী ধ্যান-ধারনায় নিজেকে সমৃদ্ধ করতে হবে। এছাড়া তাদেরকে সমাজের জনমত গঠনকারি হিসেবে কাজ করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি চেয়েছিলেন। তিনি একটি ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। তিনি জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কৌশল বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
আবদুল হামিদ তাঁর রাজনৈতিক স্মৃতি চারণ করে বলেন, ‘আজ আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করছি, যিনি স্বাধীন-স্বার্বভৌম বাংলাদেশের রূপকার। আমি পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি মহান ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ স্বাধিকার আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের সকলকে।’
তিনি বলেন, ‘গুরুদয়াল কলেজে ছাত্রাবস্থায় ১৯৬১ সালে রাজনীতিতে আমার হাতেখড়ি। ছাত্র থাকাকালেই আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে আমি অংশগ্রহণ করি। এ জন্য আমাকে কারাভোগও করতে হয়েছে। সেই থেকে দীর্ঘ পাঁচ যুগের বেশি সময় সরাসরি রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মধ্য দিয়েই আমার জীবন কেটেছে। আপনাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ও ভালবাসা পেয়ে আমি প্রতিবারই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি।’
আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আমি কখনোই অশুভ শক্তির সঙ্গে আপোস করিনি। আমি সব সময়ই আমার আদর্শে অটল ছিলাম। আমার আর চাওয়া-পাওয়ার কিছুই নেই। বাকীটা জীবন আমি সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে যেতে চাই।’
রাষ্ট্রপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘সোনার বাংলা’ দেখে যেতে পারবেন বলে আশা করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাজিতপুর ডিগ্রী কলেজের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মোহম্মদ আফজাল হোসেন এমপি, রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক এমপি, মোহম্মদ সুহরাব উদ্দিন এমপি, কিশোরগঞ্জ জিলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এম জিল্লুর রহমান, সাবেক এমপি মঞ্জুর আহমেদ বাচ্চু, ব্যবসায়ী আবুল মন্সুর বাদল ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল এ.কে.এম মোস্তফা কামাল।
পরে একটি মনোজ্ঞ সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এর আগে আজ রাষ্ট্রপতি বাজিতপুর উপজেলায় একটি স্মৃতিসৌধ, মুক্তিযোদ্ধা চত্ত্বর এবং চারটি সেতুর নির্মাণকাজসহ বেশ কয়েকটি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।
গ্রামের বাড়িতে চারদিনের এই সফরের অংশ হিসেবে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ কটিয়াদি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে আগামীকাল একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন।

বাংলাদেশ