বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। দেশব্যাপী বহুল আলোচিত কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী নৈশকোচে পেট্রোল বোমা হামলা চালিয়ে ৮ যাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনাসহ হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দায়েরকৃত পৃথক মামলায় আদালত এই পরোয়ানা জারি করেন।
সোমবার দুপুরে কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ বেগম জেসমিন আরা এ আদেশ দেন। ওই মামলায় চার্জশিটভুক্ত বিএনপি জামায়াতের আরও অনেক কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মী রয়েছেন। আদালতের পিপি অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান লিটন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সেদিনের নারকীয় হত্যাকাণ্ড
বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের ডাকা লাগাতার হরতাল-অবরোধ চলাকালে ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ভোর রাতে কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী আইকন পরিবহনের একটি নৈশকোচ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুর এলাকায় আসার পর নাশকতাকারীদের হামলার শিকার হয়। এসময় নিক্ষিপ্ত পেট্রলবোমা হামলায় ঘটনাস্থলে ৭ জন এবং পরে ঢামেকের বার্ন ইউনিটে রাশেদুল ইসলাম নামের আরও এক জনের মৃত্যু হয়।
নারকীয়ভাবে ৮ জনকে হত্যা ছাড়াও ওই বছরের ২৫ জানুয়ারি চৌদ্দগ্রামের হায়দারপুল এলাকায় কাভার্ডভ্যানে পেট্রল বোমা হামলার ঘটনায় এসআই নুরুজ্জামান বাদী হয়ে ওই পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করেছিলেন।
ঘটনাস্থলে নিহতরা হলেন, যশোরের গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদার জেলা সদরের ঘোপসেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা হাজী রুকনুজ্জামানের ছেলে নুরুজ্জামান পাপলু (৫০), তার একমাত্র মেয়ে যশোর পুলিশ লাইন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী মাইশা তাসলিম (১৪), কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার গাইনাকাটা গ্রামের মৃত ছিদ্দিক আহম্মদের ছেলে আবু তাহের (৩৮) ও একই গ্রামের সালেহ আহম্মদের ছেলে আবু ইউসুফ (৪৫), নরসিংদীর পলাশ উপজেলার বালুরচর পাড়ার জসিম উদ্দিন মানিকের স্ত্রী আসমা আক্তার (৩৮) ও তার ছেলে মাহমুদুল হাসান শান্ত (১৩) এবং শরীয়তপুর জেলার ঘোষেরহাট থানার দক্ষিণ গজারিয়া গ্রামের মৃত নজরখার ছেলে ওয়াসিম (৩৮)।
নিহতদের মধ্যে ওয়াসিম ছাড়া সকলের মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই হস্তান্তর করায় পরবর্তীতে মামলা তদন্তে দেখা দেয় বিপত্তি। কিন্তু মামলার বিচারের প্রক্রিয়ায় ময়নাতদন্ত ছাড়া পরবর্তীতে জটিলতা দেখা দেয়ার আশঙ্কায় পরে আদালতের নির্দেশে কক্সবাজারের ইউসুফ ও রাশেদুল ইসলামের মরদেহ ২০১৫ সালের ২১ নভেম্বর, যশোরের নুরুজ্জামান পপলু ও তার মেয়ে মাইশার মরদেহ গত বছরের (২০১৬) ২১ জানুয়ারি, শরীয়তপুরের ওয়াসিমের মরদেহ গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি এবং নরসিংদীর আসমা ও তার ছেলে মাহমুদুল হাসান শান্তর মরদেহ গত বছরের ১ মার্চ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়।
মামলার চার্জশিটে অভিযুক্ত যারা
আলোচিত ওই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ঘটনাসহ বিস্ফোরক আইনে দায়েরকৃত অপর মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই ইব্রাহিম বেগম খালেদা জিয়াসহ ৭৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ওই দুটি মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার নাম ৫১ নম্বরে অর্ন্তভুক্ত করা হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে বাসে পেট্রল বোমা হামলায় ৮ জনকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলায় খালেদা জিয়া ছাড়াও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা ও চৌদ্দগ্রামের সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরকে প্রধান আসামি করা হয়।
এ দুটি মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, এম.কে আনোয়ার, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, স্থানীয় বিএনপি নেতা কামরুল হুদা, জামায়াত নেতা শাহাব উদ্দিন, শাহ মিজানুর রহমান, জামাল, মনির, তহিদুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট শাহজাহানসহ ৭৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
অপর মামলায় খালেদা জিয়াসহ ৩২ জন স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করা হয়। এ মামলায় খালেদা জিয়ার নাম ৩২ নম্বরে অর্ন্তভুক্ত করা হয়।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল ফয়সাল জানান, এসব মামলায় পুলিশ এ পর্যন্ত ২৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। এদের মধ্যে জাকির, মোতালেব ও আলমগীর নামে ৩ জন আসামি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।