বাংলাদেশ দলের ‘ভিউইং’ অঞ্চলে যে ডাক আউটটা রাখা আছে তার একটি চেয়ারে পা তুলে বসেছিলেন প্রধান কোচ স্টুয়ার্ট ল। দূর থেকে তাকে চেনাই যাচ্ছিলো না। ফ্রেঞ্চকাট দাঁড়িতে অন্যরকম দেখাচ্ছিলো। তামিম ইকবাল গিয়ে কোচের সামনের চেয়ারে মুখোমুখি বসে আলাপ জুড়ে দেওয়ায় নিশ্চিত হওয়া গেলো অনুমান ভুল হয়নি। প্রায় এক ঘণ্টা কথাবার্তা হয় দু’জনের মধ্যে। আলোচনার বিষয়বস্তু ক্রিকেটই হবে। খেলার আগের দিন এছাড়া আর কি নিয়ে আলোচনা হবে।
ক্রিকেটের আলোচনায় স্টুয়ার্টকে অতটা গা করতে না দেখে সন্দেহ হচ্ছিলো। আলোচনার শেষপর্যন্ত গুটিশুটি মেরে বসে ছিলেন। যতদূর জানা কোচের শরীর টরিরও খারাপ করেনি। তাহলে বিমর্ষ হয়ে থাকার কারণ কি?
পাকিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজ নিয়ে উল্টাপাল্টা ভাবতে ভাবতে মন খারাপ করেনি তো? অনুসন্ধানী মনের তাড়া খেয়ে শেষপর্যন্ত খোঁজখবর করেও তেমন কিছু জানা গেলো না। দলের ভালো মন্দ নিয়ে ভাবছিলেন। অনুশীলনে কে কতটা মনযোগী তা পর্যবেক্ষণ করছিলেন আড়ালে থেকে। খেলোয়াড়দের একাগ্রতা দেখে খারাপ লাগেনি তার। এই দলটিকে একটা উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারলে তারই তো বেশি ভালো লাগবে। বিশেষ করে পাকিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজে বাংলাদেশ দল যদি দু’একটা ম্যাচ জিতে নিতে পারে, তা হলে মন্দ হয় না। খেলার পরিকল্পনা করতেই একটু আলাদা থাকতে চেয়েছিলেন।
যদিও পাকিস্তান দলকে হারানো শক্ত কাজ। শহীদ আফ্রিদের দলটি বেশ গোছানো ক্রিকেট খেলছে। আরব আমিরাতের নিরপেক্ষ ভেন্যুতে শ্রীলঙ্কাকে সবধরণের ক্রিকেটে হারিয়েছে সোজা ঢাকায় চলে এসেছে বাংলাদেশ বিপক্ষে একটি টি-টোয়েন্টি, তিনটি ওয়ানডে এবং দুটি টেস্ট খেলার জন্য। মঙ্গলবার টি-টোয়েন্টি দিয়ে তাদের ক্রিকেট অভিযান শুরু হচ্ছে। পাকিস্তান অধিনায়ক মিসবাহ উল হক সোমবার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিপক্ষ বাংলাদেশকে সম্মান দেখিয়ে যা বলেছেন তা নাও হতে পারে,“বাংলাদেশ ভালো দল। বিশেষ করে নিজেদের মাঠে, নিজেদের উইকেটে বেশি ভালো খেলে। আমাদের বিপক্ষে তারা ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারে, এটা জেনে আমরাও সতর্ক আছি। আশা করছি, বাংলাদেশ সফরে নিজেদের খেলায় আরও উন্নতি আনতে পারবো।”
পাকিস্তান দল যদি খুব একটা ভুল না করে তাহলে বাংলাদেশ দলের জন্য খেলায় জেতা কঠিন। বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম অবশ্য আশা ছেড়ে দেননি,“আমার মনে হয় বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন সেই অধ্যায়টা পার করে এসেছে। যখন বড় কোন দলের সঙ্গে খেললে সন্মানজনক হারের লক্ষ্য থাকত। এখন এরকম মানসিকতা কোন খেলোয়াড়ের নেই। প্রতিটা ম্যাচ জেতার জন্যই খেলব। পাকিস্তান হোক কি অস্ট্রেলিয়া। আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ খেলব। প্রতিপক্ষকে বিচার না করে আমাদের শতভাগ দিয়ে খেললে, এটা একটা ভালো সিরিজ হবে।”
দেশের মাঠে খেলার অনেক সুবিধা থাকে। উইকেট নিজেদের মতো হয়। দর্শক সমর্থন থাকে। আবার প্রত্যাশার চাপও আছে। বাংলাদেশ অধিনায়ক স্বাগতিকতার সুবিধার কথা না ভেবে ভালো খেলার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন,“আমরা ভালো না খেললে স্বাগতিকতার সুবিধা সবসময় কাজে লাগে না। ওয়েষ্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ সিরিজটার কথাই ধরুন। আমরা অনেক কিছুই পেয়েছিলাম কিন্তু ব্যাটসম্যানরা হোক বা বোলাররা, সেসব সুবিধা নিতে পারিনি। এখানে যার যার দায়িত্ব এবং সামর্থ্য অনুযায়ী খেলাটাই আসল। তাহলে যে কোন দলের সঙ্গে ভালো খেলা সম্ভব। পাকিস্তান এখন ওয়ানডে এবং টেস্টে খুব ভালো ফর্মে আছে। তার মানে এই না যে তারা আসবে এবং আমাদের হারিয়ে চলে যাবে। প্রত্যেকটা খেলাই প্রথম থেকে শুরু করতে হয়। সুতরাং আমরা যদি ভালো খেলতে পারি, তাহলে কে জানে কি হতে পারে।”
বাংলাদেশ দলের টি-টোয়েন্টি অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখের নয়। খুব কম ম্যাচেই তারা সাফল্য পেয়েছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে আগে যে চারটি ম্যাচ খেলেছে তার কোনটিতেই জয় নেই। ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতাও হয়নি। পরিসংখ্যানের পুরো সুবিধা নিয়ে খেলতে নামবে সফরকারী দলটি। তারপরেও সংক্ষিপ্ত ভার্সনের খেলা হওয়ায় একটা সম্ভাবনা যে থাকছে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক তা বোঝানোর চেষ্টাও করেছেন,“টি-টোয়েন্টি সংক্ষিপ্ত খেলা। ওয়েষ্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলার আগে তারাও ফেভারিট ছিলো। কারণ এ খেলাটা আমরা সচরাচর ভালো খেলে থাকি না। ওই ম্যাচটা কিন্তু আমরা জিতে বেরিয়েছিলাম। কালকের ম্যাচে আমরা ভালো শুরু করলে এবং সেটা ধরে রাখতে পারলে ফল আমাদের পক্ষেও আসতে পারে। হ্যাঁ, তারা ভালো ফর্মে আছে। কিন্তু কাল তো সেই প্রথম থেকেই শুরু করতে হবে। তারা যা করে এসেছে সেসব এখন ইতিহাস।”
মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিকেল পাঁচটায় খেলা শুরু হবে। দেশের ভেতরে খেলা দেখাবে বাংলাদেশ টেলিভিশন। পাকিস্তানে তাদের জাতীয় টেলিভিশন পিটিভিতে খেলা দেখা যাবে।