বঙ্গোপসাগরসহ উপকূলের সর্বত্র এখন ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম। এসময় একটি মা ইলিশ বেঁচে থাকলে জন্ম নেবে হাজারও ইলিশ। তাই ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে উপকূলীয় নদ-নদী ও বঙ্গোপসাগরে ১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ করেছে সরকার। বাংলাদেশি জেলেরা এ নিষেধাজ্ঞা মেনে ইলিশ শিকার থেকে বিরত থাকলেও এ সুযোগে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে নির্বিঘ্নে ইলিশ শিকার করছে ভারতীয় জেলেরা। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী বাংলাদেশি জেলেদের।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তাফা চৌধুরী জানান, মৎস্য গবেষকরা আশ্বিন মাসের মধুপূর্ণিমার আগের তিন দিন থেকে পরবর্তী ১৫ দিন মা ইলিশের সর্বোচ্চ প্রজননকাল চিহ্নিত করেছেন। তাই এ বছরই প্রথম ১১ দিনের পরিবর্তে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞার সময় সীমা ২২ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। শুধু আহরণই নয়, ইলিশ সংরক্ষণ, পরিবহন ও বিপণনও এ সময় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০৩ সাল থেকে এ সময়ে উপকূলীয় নদ-নদী ও সাগর মোহনায় ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে আসছে বাংলাদেশ সরকার।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ইলিশ শিকারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশি জেলেরা মানলেও মিয়ানমার ও ভারতীয় জেলেরা এসব নিসেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে বাংলাদেশের জলসীমায় অবৈধ অনুপ্রবেশ করে নির্বিঘ্নে মাছ শিকার করে যাচ্ছে। এতে প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণ ও নিরাপদ প্রজননে বাংলাদেশ সরকারের উদ্দেশ্য ভেস্তে যাচ্ছে।
এসময়ে ভারতীয় জেলেদের বাংলাদেশের জল সীমায় অনুপ্রবেশ করে ইলিশ শিকার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, মা ইলিশ সংরক্ষণে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও ইন্ডিয়ার মধ্যে একটি সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল মান্নান জানান, একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি সুদীর্ঘ বছরের জলদস্যু সমস্যা তো রয়েছেই। তার উপরে গত কয়েক বছর ধরে শুরু হয়েছে ভিনদেশি ট্রলি ও ট্রলারের অত্যাচার। এত সমস্যার বেড়াজালে দেশীয় জেলেরা আর কুলিয়ে উঠতে পারছে না।
জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার শ্রমিক নেতা আব্দুল মান্নান জানান, গভীর সাগরে প্রতিদিন ভারতীয় স্বয়ংক্রিয় মৎস্য শিকারী ট্রলার নির্বিঘ্নে ইলিশ শিকার করে যাচ্ছে। শুধু ইলিশ প্রজনন মৌসুমেই নয়, বছরজুড়েই বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ সীমানায় চলে এসব বিদেশি ট্রলারের রামরাজত্ব।
এদিকে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞার কারণে দক্ষিণ উপকূলের অন্তত ৫০ হাজার জেলে ২২ দিনের জন্য বেকার হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ মৎস উন্নয়ন কর্পোরেশন পরিচালিত পাথরঘাটার দু’টি পাইকারি বাজার (পাথরঘাটা ও চরদুয়ানী) বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছে শত শত শ্রমিক। ব্যবসায়-বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। ইলিশ প্রজনন মৌসুমে প্রান্তিক জেলে ও মৎস্য শ্রমিকদের জন্য বিকল্প কোনো কর্ম সংস্থান কিংবা কোনোরূপ পূণর্বাসন সহায়তার ব্যবস্থা না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় জেলেরা।
সাধারণত সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে আশ্বিন মাস অভাবের মাস হিসেবে পরিচিত। তার ওপর ২২ দিনের ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় চরম দুর্ভোগে এখন উপকূলের হাজার হাজার জেলে।
এ বিষয়ে বরগুনার ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা মো. ওয়াহেদুজ্জামান জানান, ভারতীয় জেলেদের আগ্রাসনের বিষয়টি নিয়ে এর আগেও জেলার মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক ও শ্রমিকরা একাধিকবার মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছেন। এ সবের প্রেক্ষিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে ইতোমধ্যে জরুরি বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। যার ফলে সম্প্রতি সমুদ্রে নৌ-বাহিনী ও কোস্ট গার্ডের নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।