মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানের মুখে পালিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার (প্রত্যাবাসন) প্রক্রিয়া ১৯৯২ সালের ঘোষণাকে ভিত্তি ধরেই এগিয়ে নিতে চায় মিয়ানমার।
আজ মঙ্গলবার দেশটির স্টেট কাউন্সেলরের কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে এমনটাই জানানো হয়েছে। গতকাল সোমবার স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির কার্যালয়ের মন্ত্রী চাও থিন সোয়ের ঢাকা সফর এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠকের পর এ বিবৃতি এলো। ১৯৯২ সালের দুই দেশের মধ্যেকার যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নিবন্ধিত রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের বৈধ কাগজপত্রসহ ফিরতে পারবে রাখাইনে।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনায় ২৪ ঘন্টার এক ঝটিকা সফরে রবিবার মধ্যরাতে ঢাকায় আসেন মিয়ানমারের মন্ত্রী সোয়ে। সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। ওই বৈঠকের পর ঢাকায় কোনও মন্তব্য না করলেও নেপি’ডতে ফেরার পর স্টেট কাউন্সেলরের কার্যালয় মন্ত্রীর সফর নিয়ে থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়া হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির ১৯ সেপ্টেম্বর দেওয়া প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন তার দফতরের মন্ত্রী সোয়ে। সু চির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের যাচাই ও প্রত্যাবাসনে প্রস্তাব রয়েছে। ১৯৯২ সালের ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের যৌথ ঘোষণা অনুসারে তাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে। এই যৌথ ঘোষণা অনুসারে ১৯৯২ থেকে ২০০৫ সালের জুলাই পর্যন্ত ২ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৫ জনকে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বৈঠকে ২০০০ সালের ১৪ জানুয়ারি ইয়াঙ্গুনে অনুষ্ঠিত দুই দেশের সিনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যকার বৈঠকে সম্পাদিত চুক্তির প্রসঙ্গটিও তুলে ধরেন।
এতে আরও বলা হয়, উভয় দেশের স্বার্থের কথা বিবেচনায় রেখে দ্বিপক্ষীয়ভাবে দুই দেশের মধ্যে এই ইস্যুগুলো বন্ধুত্বপূর্ণ উপায়ে সমাধান করা সম্ভব।
বিবৃতি অনুযায়ী, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উভয় দেশের ঐতিহ্যগত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি আরসাকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সাধারণ শত্রু বলে উল্লেখ করে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির কথাও জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ঢাকার বৈঠকের শেষ দিকে মিয়ানমারের মন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নেপিডো সফরের আমন্ত্রণ জানান। সীমান্ত সুরক্ষা, ১৯৯২ সালের এপ্রিলের যৌথ বিবৃতি অনুসারে যেসব রোহিঙ্গা মিয়ানমার ফিরতে চায়, তাদের যাচাইকরণ বিষয়ে পদক্ষেপ চূড়ান্ত করতে বাংলাদেশের মন্ত্রীকে এই সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন।
বৈঠকের পর একটি মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন মিয়ানমারের মন্ত্রী। এতে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে একটি আমন্ত্রণপত্র তুলে দেন। এতে বিস্তারিত আলোচনার জন্য বাংলাদেশের মন্ত্রীকে মিয়ানমার সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এতে আর বলা হয়েছে, আলোচনা বন্ধুত্বপূর্ণ ও উষ্ণ ছিল।
এদিকে, বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে মিয়ানমার। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য দুই পক্ষ একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে সম্মত হয়েছে। এই জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপে কারা থাকবেন তা দুই পক্ষ মিলে ঠিক করবে।’