পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, বাংলাদেশ ও ওমানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দিতে তার ওমান সফর একটি শুভ সূচনা।
মাস্কট সফররত দীপুমনি বুধবার এ কথা বলেন। বাংলাদেশের তিনিই প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী, যিনি মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশ সফর করছেন।
সফরের শুরুতেই চার জন মন্ত্রীর পাশাপাশি দেশটির পুলিশ ও কাস্টমস প্রধানের সঙ্গে আলোচনার পর দীপু মনি বলেন, “বিনিয়োগ ও বাণিজ্যসহ কৃষি খাতে সহযোগিতার পাশাপাশি মানবসম্পদ রপ্তানির এক বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে দেশটিতে।
“এর আগে মানবসম্পদ রপ্তানি ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু বর্তমানে ব্যবসা ও বিনিয়োগসহ কৃষিখাতে সহযোগিতার মত বহুমাত্রিক স্বার্থে আমরা কথা বলছি।”
এর আগে কেন পারস্য উপসাগরের এই দেশটির বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার উদাসীন ছিল- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “এ রকম সফর অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল। সফর না হওয়াটা সত্যিই বিস্ময়কর।”
গত তিন দশক ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা ওমানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ৮০’র দশকের শুরুতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ওআইসির শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান করতে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন বলে দীপু মনি জানান।
দুই দিনের এ সফরের দ্বিতীয় দিনে সুলতানশাসিত দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউসুফ বিন আলাওয়ি বিন আব্দুল¬াহ, কৃষিমন্ত্রী ফুয়াদ বিন জাফর বিন মোহাম্মেদ আল সাজওয়ানি, পুলিশ প্রধান হাসান মোহসেন আল শেরেকি, বাণিজ্যমন্ত্রী আলী বিন মাসুদ বিন আলী আল সুনেইদি এবং জ্বালানি মন্ত্রী মোহাম্মেদ বিন হামাদ আল রুমহীর সঙ্গে বৈঠক করেন দীপু মনি।
ওমানে কৃষি ও মৎস্য খাতে সহযোগিতার বিস্তৃত সুযোগ রয়েছে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, “তারা দক্ষ কৃষক নিতে চায় এবং আমাদের কৃষি প্রযুক্তির ব্যাপারে তারা আগ্রহী।”
ওমানে বসবাসরত পাঁচ লাখ বাংলাদেশীর অধিকাংশই কৃষিকাজে জড়িত জানিয়ে তিনি বলেন, “পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে ওমান খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুণ করতে সার ও কীটনাশক ব্যবহারে দক্ষ কৃষক নিয়োগ দিতে আগ্রহী বলে দেশটির কৃষিমন্ত্রী আমাকে জানিয়েছেন।”
“বাংলাদেশী কৃষকদের সম্পর্কে ওমানে একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে দেশে পানির সুলভ হওয়ায় তারা কৃষি কাজ করতে পানির অপচয় করে। এজন্য আমাদের কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে, কারণ ওমানে পানির সঙ্কট রয়েছে,’ বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “ওমান এখন অদক্ষ শ্রমিক আমদানি করতে চায় না। এ বিষয়টি আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।”
চীন ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ অন্যান্য দেশে বিনিয়োগকারী দেশ ওমান বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ করতে পারে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান।
তিনি বলেন, “মার্চে ঢাকা সফরের সময় ওমানের একটি প্রতিনিধিদল পেট্রোবাংলার সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে চেয়েছিল। আমরা এ বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছি। আশা করি দ্রুত এ বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।”
ওমানের জ্বালানি মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে ব্যবসা-বিনিয়োগ, কৃষি, মৎস্য ও জ্বালানি খাত ছাড়াও দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
“২০১৬-১৭ মেয়াদে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশকে সমর্থন দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে দেশটি,” বলেন দীপু মনি।
ওমান বাংলাদেশি পণ্য যেমন ওষুধ ও সিরামিকের জন্য একটি সম্ভাবনাময় বাজার হতে পারে উল্লেখ করে দীপু মনি বলেন, “ওমানে একটি একক দেশের (বাংলাদেশ) বাণিজ্য মেলার আয়োজন করে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরী করতে চায়।”
দেশ দুটির মধ্যে বাণিজ্যের পরিমান খুবই অল্প থাকায় বাংলাদেশ ব্যবসা বিষয়ক যোগাযোগকে উৎসাহিত করতে চায় বলে জানা তিনি।
দীপু মনি জানান, ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশ দুটির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমান ছিল ১ কোটি ডলারের কিছু বেশি।