মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধদের আগুনে পুড়েছে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের শত শত বাড়ি-ঘর। সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের আগুন কেড়ে নিয়েছে তাদের মাথা গোঁজার শেষ আশ্রয়স্থল। আগুন থেকে রেহাই পায়নি রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে দাঁড়িয়ে থাকা গাছপালাও। বার্তাসংস্থা রয়টার্স পুড়ে যাওয়া উত্তর রাখাইনের মংডুর একটি গ্রামে সেনাবাহিনী অগ্নি-তাণ্ডবের ধ্বংসাবশেষ তুলে ধরেছে ছবিতে।
নৃশংসতার আগুনে পুড়ে কঙ্কাল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রাখাইনের গাছপালাও যেন তুলে ধরেছে মিয়ানমার নিরাপত্তাবাহিনীর কঠোর ও অমানবিক তাণ্ডবের কথা। যে তাণ্ডবের শুরু হয়েছিল গত ২৫ আগস্ট। ওইদিন রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যরা মিয়ানমার পুলিশের ৩০টি ও সেনাবাহিনীর একটি তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালায়।
হামলায় ১২ পুলিশ সদস্য নিহত হয়। হামলার পর আরসাকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তকমা লাগিয়ে দেয় মিয়ানমার। এই হামলার অভিযোগে রাখাইনে কঠোর সামরিক অভিযান শুরু হয়; যে অভিযানে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ভয়াবহ নৃশংস হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ, দলগত ধর্ষণ ও গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ করছেন। তারা বলছেন, মিয়ানমারের সেনারা নারী, তরুণী ও কিশোরীকে তাদের পরিবারের সদস্যদের সামনে গণধর্ষণ করছে। ঘরে বন্দি করে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করছে।
সেনাবাহিনীর এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ ও নৃশংসতাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল বলে মিয়ানমারকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক গণ-আদালত।
স্যাটেলাইটে রাখাইনের ছবি সংগ্রহের পর মানবাধিবার সংগঠনগুলো বলছে, সহিংসতায় উত্তর রাখাইনের চার শতাধিক গ্রামের অর্ধেকের বেশি পুড়ে গেছে। বাংলাদেশে পাড়ি জমানো রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ করেছেন। তারা বলছেন, তাদের রাখাইন ছাড়া করতেই এ অভিযান পরিচালনা করছে।
রাখাইন প্রদেশে বসবাসকারী দশ লাখের বেশি সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদেরকে নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দেয়নি মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরসা বলছে, তারা শুধুমাত্র রোহিঙ্গাদের মৌলিক মানবাধিকারের জন্য লড়াই করছে। মিয়ানমারের নিরাপত্তা সূত্রগুলো বলছে, রাখাইনে একটি ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে আরসা।
এদিকে, সহিংসতার আগুনে পুড়ে যাওয়া রাখাইনের গ্রামগুলো অধিগ্রহণের পর পুনঃউন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হবে বলে দেশটির একজন মন্ত্রীর বরাত দিয়ে সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম স্ট্রেইট টাইমস বুধবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।
দেশটির সামাজিক উন্নয়ন, ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক মন্ত্রী উইন মিয়্যাত আয়ে বলেছেন, আইন অনুযায়ী, পুড়ে যাওয়া ভূমি সরকারি জমিতে পরিণত হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের বরাত দিয়ে তিনি বলেছেন, রাখাইনের পুনঃউন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড খুবই কার্যকর হবে। এছাড়া আইন অনুযায়ী সরকার সংঘাতপূর্ণ এবং বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পুনঃউন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তত্ত্বাবধায়ন করে থাকে।
তবে এ পরিকল্পনার ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানানো হয়নি। এছাড়া রোহিঙ্গারা তাদের পুরনো গ্রামে ফিরতে চাইলে কী হবে সে বিষয়েও জানায়নি মিয়ানমার।