বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চারটি রুটে গত তিন মাসে ৩০ হাজার ২৭৭টি সিট ফাঁকা ছিল। সংস্থাটির মার্কেটিং বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের অনীহা, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এসব রুটে দীর্ঘদিন ধরে সিট ফাঁকা যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংস্থাটির মার্কেটিং বিভাগের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজসে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এয়ারলাইন্স কোম্পানির কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা নেয়ার কারণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের রুটগুলোতে নিয়মিত সিট ফাঁকা ছিল। বিষয়টি নিয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি জানতে চান, বিমানের টিকিট বিক্রেতারা অন্য এয়ারলাইন্স থেকে সুবিধা পায় কি না?
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চারটি রুটের ভ্রমণ করা যাত্রীদের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে ঢাকা-লন্ডন রুটে বিমানের মোট আসন ছিল ৩৬ হাজার ৪৫৩টি। এর মধ্যে টিকিট বিক্রি হয়েছে ২৫ হাজার ৩০৩টি। ওই তিন মাসে এ রুটে ১১ হাজার ১৫০টি আসন ফাঁকা ছিল। অর্থাৎ ৩১ ভাগ আসন ফাঁকা রেখেই এ রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটগুলো পরিচালনা করা হয়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঢাকা-সিঙ্গাপুর রুটে গত তিন মাসে যে ফ্লাইটগুলো চলাচল করেছে তাতে মোট আসন ছিল ২৯ হাজার ১৬০টি। টিকিট বিক্রি হয়েছে ১৯ হাজার ১৩২টি। আসন ফাঁকা ছিল ১০ হাজার ২৮টি। এ রুটে ৩৪ ভাগ আসনই খালি ছিল।
ঢাকা-দুবাই রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আসন ছিল ২৮ হাজার ৭৩৪টি। টিকিট বিক্রি হয়েছে ২২ হাজার ১৩৮টি। তিন মাসে এ রুটে আসন ফাঁকা ছিল ছয় হাজার ৫৯৬টি। অর্থাৎ ২৩ ভাগ আসন ফাঁকা রেখেই এ রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটগুলো চলাচল করেছে।
ঢাকা-দোহা রুটে চলাচলরত ফ্লাইটগুলোতে মোট আসন সংখ্যা ছিল ২৩ হাজার ৭৪১টি। টিকিট বিক্রি হয়েছে ২১ হাজার ২৩৮টি। এ রুটে আসন ফাঁকা ছিল দুই হাজার ৫০৩টি। অর্থাৎ ১০ ভাগ আসনই ফাঁকা ছিল। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এ রুট লাভজনক রুটগুলোর অন্যতম।
বিমানের টিকিট নিয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন তোলার পর বিমানের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে সংস্থাটির মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ আলী আহসান বাবু জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি খুবই জটিল। বিমানের মার্কেটিং পলিসি সবার বোঝার কথা নয়। ভেতরের অনেক সমস্যা মোকাবেলা করতে গিয়ে আমরা হিমসিম খাই।
তিনি বলেন, দুবাই রুটের ঢাকাগামী যাত্রীরা প্রচুর পরিমাণ মালামাল দেশে নিয়ে আসেন। অতিরিক্ত মাল বহন না করলে যাত্রীরা আমাদের ফ্লাইটে আসতে চান না। এ কারণে এয়ারক্রাফটের ধারণক্ষমতা বিবেচনায় ৩০ ভাগ টিকিট বিক্রি করা হয় না।
ঢাকা থেকে দুবাই যাওয়ার পথে তো যাত্রীরা অতিরিক্ত মালামাল বহন করে না অথচ তখন প্রচুর সিট ফাঁকা যায়, এটা কেন- এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি বিমানের জনসংযোগ বিভাগের জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
এ বিষয়ে বিমান পরিচালনা পর্ষদ চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) ইনামুল বারী জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিযোগিতামূলক এয়ারলাইন্স ব্যবসায় বিমানের ছোটখাট এয়ারক্রাফট বড় অন্তরায়। বিশেষ করে বাজেট এয়ার বা লো-কস্টের এয়ারলাইন্সগুলোর ব্যবসার সঙ্গে বিমানকে মেলান যাবে না। কারণ তারা কেবল যাত্রী টেনে অভ্যস্ত। মালামাল বা ব্যাগেজ টানতে রাজী নয়, এমনকী পয়সা ছাড়া খাবারও দেয় না। অথচ বিমানকে প্রবাসী শ্রমিকদের অতিরিক্ত মালও পরিবহন করতে হয়, আন্তর্জাতিক মানের খাবারও পরিবেশন করতে হয়। এখানে একটি জটিল সমীকরণ আছে। তবে, আমরা এসব সমস্যা ওভারকামের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, গত ১১ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকের পর অনানুষ্ঠানিক আলোচনার একপর্যায়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিটের বিষয় নিয়ে কথা ওঠে। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিমানের যাত্রীরা যখন বিমানের টিকিট করতে যান তখন বলা হয়, টিকিট নেই। বিমানে টিকিটের ক্রাইসেস দেখান হলেও অনেক সময় বিমানে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গন্তব্যস্থলে রওনা হয়। অথচ বেসরকারি বিমানগুলোতে যাত্রী ভরা থাকে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিমান থেকে যখন টিকিট পায় না তখন যাত্রীরা বেসরকারি অন্য বিমানে টিকিট করে, এটা কেন হয়? যারা টিকিট বিক্রি করে তারা অন্য এয়ারলাইন্স থেকে সুবিধা পায় কি-না, এমন প্রশ্নও রাখেন প্রধানমন্ত্রী।