ফসল বাঁচাতে বেড়া দেয়া। আর সেই বেড়াই যদি ক্ষেত খায়, তাহলে ফসলের দুর্গতির অন্ত থাকে না। আইন গড়েন যারা তারাই যদি লঙ্ঘন করেন, তাহলে সাধারণের জন্য বিধান থাকে না।
রাজধানী ঢাকার সড়ক। আইন লঙ্ঘনই যেন এখানকার সড়কের বিধান। মন্ত্রী, এমপি, সচিব, ভিআইপিরাও আইন ভাঙার প্রতিযোগিতায় নামেন। সাধারণ নাগরিকরা যানজটে নাকাল হলেও ভিআইপিরা চলেন উল্টো পথে। ভিআইপিদের উল্টো পথের গাড়ি এখানে যানজট বাড়ায়, বাড়ায় বিড়ম্বনাও।
এমন বিড়ম্বনা বাড়িয়েই রাজধানীতে উল্টো পথের সারথি হয়েছেন সচিব মাফরূহা সুলতানা। মাফরূহা পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের (পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ভারপ্রাপ্ত) সচিব। পরপর দু’দিন উল্টো পথে গাড়িয়ে চালিয়ে তিনি এখন ‘উল্টো পথের সচিব’ বলে পরিচিতি পেয়েছেন মিডিয়া পাড়ায়। একজন সচিবের এমন আচরণে বিরক্ত পুলিশ প্রশাসনও।
পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘উল্টো পথে গাড়ি চালানোর অপরাধে গতকালও (রোববার) এই সচিবের চালকের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। সচিবকে নিয়ে আজও উল্টো পথে গাড়ি চালিয়ে আসেন চালক। অবাক হয়েছি।’
সোমবার বিকেল বেলা। বাংলামোটরে তীব্র যানজট তখন। অফিস থেকে ঘরে ফেরা মানুষদের জীবন প্রায় নাভিশ্বাস। প্রচণ্ড যানজটে সড়কের এক পাশে গাড়ি প্রায় থামা তখন। সড়কের অন্য পাশে খানিক ফাঁকা। এমন ফাঁকা পেয়েই দ্রুত ছুটে আসে ঢাকা মেট্রো ঘ-১৫৪৮৮৯ নম্বরের একটি দামি গাড়ি।
বাংলামোটর মোড়ে আসতেই গাড়ির গতি থেমে যায় পুলিশের সিগন্যাল পেয়ে। ধরা পড়ে পুলিশের হাতে। উৎসুক জনতাও এগিয়ে আসেন। পুলিশের ইশারায় নেমে আসেন চালক বাবুল মোল্লা। তবে গাড়িতেই বসে থাকেন সচিব মাফরূহা সুলতানা। তবে গাড়ি থেকে চালক নামলেও সচিব নামেননি। উল্টো পথে চলার দায়ে দুঃখও প্রকাশ করেনেনি তিনি। এমনকি গাড়ির জানালা পর্যন্তও খোলেননি। পরিশেষে পুলিশ আইনি ব্যবস্থা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে সচিব মাফরূহা সুলতানার গাড়িটি।
ডিএমপির দক্ষিণ ট্রাফিক বিভাগের রমনা জোনের সহকারী কমিশনার মো. আলাউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত অভিযান চালানো হয়। বাংলামোটরে ২ ঘণ্টার অভিযানে বেশ কয়েকটি গাড়ি আটকানো হয় উল্টো পথে চালানোর অপরাধে। এর মধ্যে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিবের গাড়ি আটকানো হয়। সচিব মাফরুহা সুলতানার গাড়ি চালক ছিলেন বাবুল মোল্লা, যাকে গতকাল (রোববার) হেয়ার রোডে উল্টো পথে চলায় মামলাসহ জরিমানা করা হয়েছিল। তবে বিষয়টি নিয়ে সচিব মাফরূয়া সুলতানার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।