মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত বগুড়া-৩ (দুপচাঁচিয়া-আদমদীঘি) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মোমিন তালুকদার খোকা ওরফে খোকা রাজাকারকে পুলিশ গত ১৩২ দিনেও গ্রেফতার করতে পারেনি। এতে করে এই মামলার সাক্ষীরা তার বিচার নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন।
এ বছরের ১৮ মে তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে খোকা রাজাকারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
আদমদীঘি থানা পুলিশের ওসি শওকত কবির জানান, গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেও সাবেক এমপি খোকা আত্মগোপন করায় তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই গত ২৬ জুলাই ধার্য তারিখে ট্রাইব্যুনালে পলাতক হিসেবে এনইআর রিপোর্ট জমা দেয়া হয়েছে।
এদিকে, আব্দুল মোমিন তালুকদার ওরফে খোকা রাজাকার গ্রেফতার না হওয়ায় আদমদীঘি উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, উপজেলা আওয়ামী লীগ, উপজেলা যুবলীগ ও উপজেলা ছাত্রলীগ সোমবার বিক্ষোভ সমাবেশ করে অনতিবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে।
বিক্ষোভকালে বলা হয়, খোকার আত্মীয়-স্বজন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা। এছাড়া তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের কতিপয় দায়িত্বশীল নেতার সুনজর থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারছে না।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় এই নেতার বিরুদ্ধে ২০১১ সালে আদমদীঘির কায়েতপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সুবিদ আলী আদালতে ১৯৭১ সালে হত্যা, লুট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে মামলা করেন।
আদালত মামলাটি এজাহার হিসেবে রেকর্ডভুক্ত করার জন্য আদমদীঘি থানা পুলিশের ওসিকে নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে মামলাটি মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর হয়।
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আলতাফুর রহমান প্রায় ২ বছর সরেজমিন তদন্ত করেন। চলতি বছরের ১৫ মে তিনি ট্রাইব্যুনালে আবদুল মোমিন তালুকদার ওরফে খোকা রাজাকারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন।
দুইজন বিচারপতি ১৮ মে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপর অনেক সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
আদমদীঘি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার আলহাজ আবির উদ্দিন খান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম খান রাজু জানিয়েছেন, বর্তমানে পুলিশের হাতে আধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে। তারা আন্তরিক হলে পলাতক খোকা রাজাকারকে গ্রেফতার করা কোনো কঠিন কাজ নয়।
এই মামলার বেশ কয়েকজন সাক্ষী বলেছেন, খোকার কয়েকজন নিকট আত্মীয় সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তাদের ধারণা এ কারণেই খোকা রাজাকারকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না।
আদমদীঘি থানা পুলিশের ওসি শওকত কবির জানান, পলাতক হিসেবে তার বিরুদ্ধে বিচারকাজ চলতে পারে। পরবর্তীতে তাকে গ্রেফতার সম্ভব হলে ট্রাইব্যুনালে সোপর্দ করা হবে।