দেশীয় সংগীতাঙ্গনে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম খুরশীদ আলম। চার শতাধিক চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক করেছেন তিনি। এখনো নিয়মিত গান গাইছেন বরেণ্য এই সংগীতশিল্পী। সংগীতাঙ্গনে বিশেষ অবদানের জন্য গুনী এই সংগীত ব্যক্তিত্ব আজীবন সম্মাননা পেতে যাচ্ছেন।
আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাতটায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিতব্য ‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস পাওয়ারড আই সেভেন আপ’র ১২’তম আসরে খুরশীদ আলমের হাতে আজীন সম্মাননা তুলে দেয়া হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইজাজ খান স্বপন। তিনিই অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা ও পরিচালনা করছেন।
আজীবন সম্মাননা পাওয়া প্রসঙ্গে খুরশীদ আলম বলেন, ‘এমন একটি অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননা পাওয়া খুব আনন্দের বিষয়। আমি চ্যানেল আই পরিবারের প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। সেইসাথে আমাকে আজীব সম্মাননা দেবার জন্য যারা নির্বাচিত করেছেন তাদের প্রতিও আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, সবাই ভালো থাকবেন।’
ইজাজ খান স্বপন জানান আগামী ৬ অক্টোবর অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠানটি দুপুর ২টার সংবাদের পর চ্যানেল আইতে প্রচার হবে।
প্রসঙ্গত, এই গুণী কণ্ঠশিল্পীর জন্ম ও বেড়ে ওঠা পুরানা ঢাকায়। আলাউদ্দীন রোডে হাজীর বিরিয়ানির পাশেই ছিল বাসা। জন্ম ১৯৪৬ সালে। তিন ভাই, দুই বোনের মধ্যে সবার বড় খুরশীদ আলম। তার বাবা এ এফ তসলিমউদ্দিন এবং চাচা ডা. আবু হায়দার সাজেদুর রহমান।
ছোটবেলা থেকেই খুরশীদ আলমের সংগীতের প্রতি আকর্ষণ ছিল। পরিবারের তেমন কেউ সংগীতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। চাচা ডা. সাজেদুর রহমান টুকটাক রবীন্দ্রসংগীত গাইতেন। আর চাচার কাছেই সঙ্গীতের হাতেখড়ি খুরশীদ আলমের। স্কুল জীবনে গানের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন তিনি। স্কুল বন্ধুদের অনুপ্রেরণায় তার সংগীতে পদার্পণ।
তার স্ত্রী রীনা আলম এবং দুই মেয়ে মেহরিন আলম ও মেহনাজ আলম। গান নিয়ে কেটে যায় তার সারাদিন। অবসরে গান শোনেন, ক্রিকেট খেলা দেখেন। তিনি আজিমপুরের ওয়েস্টিন হাইস্কুলে পড়তেন। তার শিক্ষা জীবন কাটে নবাবপুর গভর্নমেন্ট হাই স্কুল, কলেজ অফ মিউজিক এবং তৎকালীন সরকারি জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি)।
১৯৬১-৬২ সালে জাতীয় আধুনিক সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় এবং ১৯৬২-৬৩ সালে জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় প্রথম হন তিনি। বাংলাদেশ বেতারে আধুনিক গানের অডিশন দিতে এসে পরিচয় হয় প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক সমর দাসের সঙ্গে। সমর দাস তাকে নিয়ে গেলেন সঙ্গীতের ওপর বিশেষ শিক্ষা দেয়ার জন্য।
তিনি তাকে শিখিয়েছেন কিভাবে কোন বিখ্যাত শিল্পীকে অনুসরণ করে ভালো গান করা যায়। তিনি তাকে প্রায় ছয় মাস সঙ্গীতের ওপর জ্ঞান দান করেন। এরপর আজাদ রহমানের সঙ্গে সঙ্গীত নিয়ে দুই বছর কাজ করেন তিনি।
১৯৬৭ সালে কবি সিরাজুল ইসলামের লেখা এবং আজাদ রহমানের সুরে কণ্ঠ দেন একটি আধুনিক গানে। যেই গানের কথা হলো ‘তোমার দু-হাত ধরে শপথ নিলাম’। সে সময়ে গানটি তৎকালীন পুরো পাকিস্তানে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। বর্তমানেও গানটি বেশ জনপ্রিয়।
সে বছরই তার কণ্ঠে আরেকটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী গান হলো ‘চঞ্চল দু’নয়নে বলো না কি খুজছো?’ মোহাম্মদ খুরশীদ আলম প্রথম প্লে-ব্যাক করেন ১৯৬৯ সালে বাবুল চৌধুরীর পরিচালনায় এবং ইফতেখারুল আলমের প্রযোজনায় ‘আগন্তুক’ ছবিতে।
উল্লেখ্য, তিনি ‘লালুভুলু’ ছবির সাতটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। সেই ছবিটিকে চারটি ভাষায় রূপান্তরিত করা হয়েছিল।