৫০০ টাকায় রোহিঙ্গাদের ঘরভাড়া

৫০০ টাকায় রোহিঙ্গাদের ঘরভাড়া

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং। হাজার হাজার রোহিঙ্গার ঢল নেমেছে এখানে। সরকার নির্ধারিত ক্যাম্পের বাইরে এসে রাস্তার দু’ধারে রাতযাপন করছেন অনেকে

স্থানীয় বাংলাদেশি অনেকে ত্রাণ দিতে গাড়ি অথবা মাইক্রোবাসে হাজির হচ্ছেন সেখানে। ত্রাণবাহী কোনো গাড়ি দেখলেই হুলুস্থুল অবস্থা তৈরি হচ্ছে। এমনই এক ঘটনায় সম্প্রতি বালুখালীতে দুই শিশু ও এক রোহিঙ্গা নারীর মৃত্যু হয়েছে।

কুতুপালংয়ের একাংশের চিত্র এমনই। সেই কুতুপালংয়ের অপর অংশের চিত্র একটু ভিন্ন। সেখানে স্থানীয়দের পরিত্যক্ত জমিগুলোতে অস্থায়ী ঘর বানিয়ে সেগুলো ভাড়া দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের। মাসিক ৫০০ টাকা বাড়িভাড়া দিয়ে অনেকটা ‘স্বাচ্ছন্দ্যে’ সেখানে বসবাস করেছেন তারা।

rohinga

মঙ্গলবার সরেজমিন কুতুপালং ক্যাম্প সংলগ্ন ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কয়েক বিঘা জমিতে বাঁশ ও কালো পলিথিন দিয়ে অস্থায়ী ঘর তৈরি করা হয়েছে। ছোট-বড় মিলে সেখানে আছে প্রায় ১৫০ ঘর। এসব ঘরে কয়েক হাজার রোহিঙ্গার বসবাস।

সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গারা জাগো নিউজকে জানান, সাতদিন ধরে তারা সেখানে অবস্থান করছেন। কুতুপালংয়ের ওই জমির মালিক শাহজাহান তাদের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা অগ্রিম নিয়ে বাড়িভাড়া দিয়েছেন। প্রতি মাসে অগ্রিম থেকে ৫০০ টাকা করে কাটা হবে।

rohinga

১৩ সেপ্টেম্বর ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন কামাল হোসেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, দু’দিন হেঁটে সীমান্ত পার হই। এপারে আসার পর ট্রাকে আমাদের এখানে আনা হয়। দেখলাম খালি জায়গা। মালিককে টাকা দিয়ে এখানেই থেকে গেলাম।

অন্য রোহিঙ্গাদের চেয়ে কিছুটা ‘স্বাচ্ছন্দ্যে’ থাকলেও খুব একটা ভালো নেই তারা। কামাল বলেন, এখানে কেউ এক ফোঁটা পানিও ত্রাণ দেয় না। আমরা ঘর ছেড়ে বের হই না কারণ আমাদের ঘর দখল হয়ে যেতে পারে অথবা আমাদের ধরে ক্যাম্পে দেয়া হতে পারে। আমরা ক্যাম্পে যেতে চাই না। সেখানে হুড়োহুড়ি করে খাবার নিতে হয়।

মিয়ানমারের ফরিয়াবাজারের বাসিন্দা আমেনা খাতুন বলেন, নিজ দেশে আমরা যেন বন্দি ছিলাম। নির্দিষ্ট একটি স্থানে আমাদের থাকতে হতো। এর বাইরে গেলেই মারধর করা হতো। বন্দি জীবন থেকে মুক্তি পেতে রাতের আঁধারে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছি। এখানে মোটামুটি ভালোই আছি।

rohinga

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘরভাড়া নেয়ার পাশাপাশি বাজার থেকে সবজি কিনে নিজেদের মধ্যে সেগুলো বিক্রি করছেন রোহিঙ্গারা।

ঘরভাড়া নেয়ার পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে আগত অনেক রোহিঙ্গাকে কুতুপালংয়ের আশপাশের গ্রামে আত্মীয়-স্বজনের বাসায় আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। খরমিনা নামের এক নারী বলেন, আমরা আগে প্রায়ই সীমান্ত পার হয়ে কক্সবাজারে ফুপুর বাসায় আসতাম। এখন পালংখালীর ফুপুর বাসায় থাকছি। তবে খাবার সঙ্কটের কারণে ত্রাণ নিতে রাস্তায় এসেছি। রাতে আবার ফুপুর বাড়ি ফিরে যাব।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুলিশ ও বিদ্রোহী গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশ সদস্যসহ বহু রোহিঙ্গা হতাহত হন। ওই ঘটনার পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ‘শুদ্ধি অভিযান’র নামে রাখাইন রাজ্যে নিরীহ মানুষের ওপর বর্বর নির্যাতন শুরু করে। হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘরে আগুনসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যা দেশটির সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ সন্ত্রাসী দ্বারা সংঘটিত হচ্ছে না।

rohinga

জাতিসংঘের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২৫ আগস্টের পর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে মোট চার লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছেন। তাদের মধ্যে শিশু দুই লাখ ৪০ হাজার, এক বছরের কম বয়সী শিশু ৩৬ হাজার, অন্তঃসত্ত্বা ও প্রসূতি নারী ৫২ হাজার।

জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম এবং শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, সহসা মিয়ানমারকে চাপ দিয়ে সমস্যার সমাধান করা না গেলে এ সপ্তাহেই বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে।

বাংলাদেশ