আমি চালের আড়তে চাকরি করি। তাই বলে কি চাল ফ্রি পাই? কিনেই খেতে হয়। এভাবে অস্বাভাবিক হারে চালের দাম বাড়ায় কষ্টের মধ্যে পড়ে গেছি। বেতন তো বাড়েনি। সব কিছুর একটা সীমা আছে। সীমা অতিক্রমকারীদের আল্লাহ পছন্দ করেন না। বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেছেন চাতাল মালিকরা। এদেরকে শক্ত করে ধরলেই চালের দাম কমবে।’ -কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর বাবু বাজারের আমেনা রাইস এসেন্সির তত্বাবধায়ক সেলিম।
রাজধানীর পাইকারি বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। হঠাৎ চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। বিশেষ করে দরিদ্রসীমার নিচে বা কাছাকাছি থাকা প্রায় দুই কোটি মানুষ প্রয়োজনীয় খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন।
জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলার সময় চালের দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সেলিম। তার মতে, চাতাল মালিক ও মজুদদারদের শক্ত হাতে ধরলেই চালের দাম কমতে বাধ্য।
একই কথা বললেন বাবু বাজার ও বাতামতলীর ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, মজুদকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের এই অবস্থানকে (অবৈধ মজুদদারদের বিরুদ্ধে অভিযান) স্বাগত জানাই। এটা অব্যাহত রাখতে হবে। কেননা চালের দাম বৃদ্ধির তেমন কোনো কারণই নেই। চাতাল মালিকরা সবাই মিলে সিন্ডিকেট করে এই অবস্থায় নিয়ে গেছে। এখন অভিযান চালালে দাম কমে যাবে।
রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে নিম্নআয়ের মানুষের। বাজার নিয়ন্ত্রণে গত রোববার থেকে দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরে খোলাবাজারে চাল বিক্রি (ওএমএস) কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলার অবৈধ মজুদদারদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বাবু বাজারের হাজী রাইস এজেন্সির সত্বাধিকারী হাজী জিয়াউল হক বলেন, চাতালে চাল আছে। সরকার যদি অভিযান অব্যাহত রাখে তাহলে তারা দাম কমাতে বাধ্য।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চালের দাম কম থাকার সময় আমরা যখন অডার দেই, তখন তারা এক গাড়ি অর্ডার দিলে দেড় গাড়ি পাঠায়। আর চালের দাম বাড়লে উল্টে যায়। তখন বলে- আরও অনেক অর্ডার আছে, কম নেন। চাল না দিয়ে টাকাও ফেরত পাঠায়। এভাবেই তারা চালের দাম বাড়ায়।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সপ্তাহ আগেও এসব বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হয়েছিল ৪১-৪২ টাকায়। একই চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকায়। অন্যান্য চালের দামও প্রায় একই হারে বেড়েছে।
তবে সরকারের অভিযান পরিচালনা শুরু করায় পাইকারি বাজারে কিছুটা কমতে শুরু করেছে চালের দাম। রাজধানীর বাতামতলী ও বাবুবাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, দাম আরও কমবে। তবে সরকারকে আরও শক্ত হতে হবে।
বাবুবাজারের জনপ্রিয় রাইস এজেন্সির পরিচালক টগর আহাম্মেদ বলেন, বাজারে চালের দাম কমতির দিকে। এর পেছনে দুটি কারণ, একদিকে ওএমএস, অন্যদিকে সরকারের অভিযান পরিচালনা। অভিযান অব্যাহত থাকলে চালের দাম দুই-তিন দিনেই আরও কমে যাবে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে পাইকারি পর্যায়ে মানভেদে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৫৮-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহ ছিল ৫২-৫৩ টাকা। একইভাবে এক সপ্তাহ আগে ৫৮-৬০ টাকা কেজিদরের নাজিরশাইল চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৮-৭০ টাকায়। এ ছাড়া ৪৬-৪৭ টাকার বিআর-২৮ চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৪-৫৬ টাকায়।
হঠাৎ চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ। বাবুবাজার এলাকায় রিকসাচালক সফিক উদ্দীন বলেন, আয় খুব বাড়েনি। তবে এভাবে চালের দাম বাড়ায় কষ্টে পড়ে গেছি। শুধু চালের দাম না, অন্যান্য জিনিসের দামও বাড়তি। এতে গরীবের মরণ হইছে।
খোলা বাজারের চাল নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, ‘খোলা বাজারে ট্রাকে করে যে চাল দেয়, সেটা খাওয়া যায় না। রান্না করলে ডাল খিচুরি হয়ে যায়। এ জন্য বাইরের চালই কিনে খাই।’