আতঙ্কে ‘বিকাশ’ এজেন্টরা

আতঙ্কে ‘বিকাশ’ এজেন্টরা

অর্থপাচার, সন্ত্রাসে অর্থায়ন, চাঁদাবাজি ও প্রতারণাসহ বিভিন্ন অভিযোগে মোবাইল ব্যাংকিং ‘বিকাশ’র ২ হাজার ৮৮৭ এজেন্টের লেনদেন স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাদের অনিয়মের তদন্ত করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ বিকাশ কর্তৃপক্ষ। ফলে আতঙ্কে রয়েছেন বিকাশ এজেন্টরা।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সম্প্রতি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনের বিধান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন নির্দেশনা লঙ্ঘন করায় বিকাশের ২ হাজার ৮৮৭ এজেন্টের লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণ হলে নেয়া হবে ব্যবস্থা।

বিকাশের এজেন্ট আশরাফুল ইসলাম বলেন, গত বৃহস্পতিবার থেকে লেনদেন বন্ধ। বিকাশের ব্যবসার জন্যই দোকান দিয়েছিলাম। এখন যতদিন বন্ধ থাকবে ততদিন লোকসান হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ব্যবসা করি। কে কোন উদ্দেশ্যে লেনদেন করে এটা জানি না, জানার কথাও না। আর এখন তো ভয়ে আছি, অ্যাকাউন্ট নম্বরে নাকি তদন্ত হচ্ছে।’

আরেক এজেন্ট মনির বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে হঠাৎ বিকাশ অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যায়। পরে রাত ৯টার দিকে আবার অ্যাকাউন্ট সচল হয়। শুনলাম অ্যাকাউন্টের তদন্ত চলছে। কোনো সমস্যা হয় কিনা এ নিয়ে কিছুটা আতঙ্কে আছি।

এ বিষয়ে বিকাশের হেড অব কর্পোরেট কমিউনিকেশন্স শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম জাগো নিউজকে বলেন, বিকাশ অ্যাকাউন্টের লেনদেন সবসময় নজরদারিতে রাখা হয়। সন্দেহজনক অ্যাকাউন্টের বিষয়ে নিয়মিত বাংলাদেশ ব্যাংককে অবগত করে বিকাশ। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ২ হাজার ৮৮৭টি এজেন্টের লেনদেন সাময়িক স্থগিত রাখা হয়েছে। এসব এজেন্টের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। অনিয়মের প্রমাণ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি বলেন, বিকাশের ২ কোটি ৮৫ লাখ গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় পৌনে ২ লাখ এজেন্ট। কিছু এজেন্টের সমস্যা হতেই পারে। সন্দেহজনক লেনদেন তদন্ত একটি চলমান প্রক্রিয়া।

এদিকে বন্ধ হওয়া কিছু অ্যাকাউন্ট আবার সচলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি জানেন না বলে জানান।

জানা গেছে, একাধিক সিম ও পরিচয়পত্রের মাধ্যমে হিসাব খুলে অর্থ আত্মসাৎ করছে প্রতারক চক্র। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দেশিত কেওয়াইসি (নো ইউর কাস্টমার ) ফরম যথাযথভাবে পূরণ না করেও এজেন্ট হচ্ছেন অনেকেই, যা প্রতারণার অন্যতম হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে দুবাই ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাঠানোর নামে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় করছে বেশকিছু অসাধু চক্র। এ অর্থ আদায় হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।

এদিকে দেশের জেলা ও উপজেলা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে বিকাশের মাধ্যমে হুন্ডির শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। যার প্রভাব পড়েছে রেমিট্যান্সে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিকাশের লোগোসহ সাইনবোর্ড, ব্যানারে অর্থ লেনদেন করছে। যার কোনো অনুমোদন নেই। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বিএফআইইউ বলছে, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনের বিধান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন নির্দেশনা লঙ্ঘন করায় বিকাশের ২ হাজার ৮৮৭ এজেন্টের লেনদেন স্থগিত রয়েছে। একই সঙ্গে এজেন্ট কর্তৃক একই পরিচয়পত্রের বিপরীতে একাধিক হিসাব ৩০ দিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া পরবর্তী তদন্ত ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কয়েকটি (কতিপয়) হিসাবের তথ্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে দেয়া হয়েছে।

সংস্থাটি আরও বলছে, বিকাশের মাধ্যমে অপহরণ, জঙ্গি অর্থায়ন, রেমিট্যান্সের (হুন্ডি) অর্থ বিতরণসহ বিভিন্ন অপরাধের অর্থ লেনদেনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বিএফআইইউ প্রথম পর্যায়ে এ পদক্ষেপ নিয়েছে।

বিএফআইইউ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে পাওয়া অনিয়ম, রেমিট্যান্স কমার পিছনে কারণ, বিকাশ ও গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অন্যান্য মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে বর্তমানে অনুসন্ধান এবং ব্যবস্থা গ্রহণ বিবেচনাধীন বলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে।

অর্থ বাণিজ্য