প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রধান বিচারপতি ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের পর্যবেক্ষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে জামায়াত-বিএনপির অপপ্রচারের পুনরাবৃত্তি করেছেন। তার এ রায় ও পর্যবেক্ষণে অনেক সাংঘর্ষিক বিষয় রয়েছে। প্রধান বিচারপতি স্বাধীনতাযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা নিয়ে কথা বলেছেন। একদিকে তিনি আমিত্বের বিরুদ্ধে বলছেন, আরেকদিকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে আমিত্বের ব্যবস্থা করছেন।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণ বাতিলের জন্য বুধবার সংসদে আনীত প্রস্তাব আলোচনায় অংশ নিয়ে একথা বলেন তিনি।
বুধবার জাতীয় সংসদে এই সাধারণ আলোচনার প্রস্তাব আনেন জাসদের একাংশের সভাপতি চট্টগ্রাম-৮ আসনের এমপি মইন উদ্দীন খান বাদল। এ সংক্রান্ত সাধারণ আলোচনা শেষে প্রস্তাবটি পাস হয়। এসময় সংসদের সভাপতিত্বে ছিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
শেখ হাসিনা বলেন, আদালত আইন প্রণয়ন করতে পারে না, সংশোধনও করতে পারে না। সেই অধিকার কেবল সংসদের। আমরা ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে যখন ১৯৭২-এর সংবিধানের মূল কাঠামোয় ফিরে গেলাম তখন হাইকোর্ট বাতিল করে দিল। এরপর আপিল বিভাগের রায়ে প্রধান বিচারপতি শতশত বছর পেছনে ফিরে নানা ধরনের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেখানে নানা স্ববিরোধীতাও আছে। কোথা থেকে কারা এটা তৈরি করে দিয়েছে সেটাও একটা প্রশ্ন। জনগণের কাছে সবার জবাবদিহিতা থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রধান বিচারপতির কাছে প্রশ্ন- সমস্ত জুডিশিয়ারি এক ব্যক্তির হাতে থাকবে। বিচারপতিদের চাকরি থাকবে কী থাকবে না সেটাও এক ব্যক্তির হাতেই থাকবে? প্রধান বিচারপতি যদি কারও প্রতি বিরাগ হন তাহলে তার চাকরিটাও যাবে।
তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি নারী আসন নিয়েও কথা বলেছেন। তিনি এখানে আপত্তি দেখিয়ে বলেছেন অনুচ্ছেদ ৭(১) এর সঙ্গে নাকি অসামঞ্জস্য।
জাতীয় সংসদ নেতা বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ। সেই জনগণ সাংসদ নির্বাচিত করে, সেই সংসদের সদস্যরাই নারী সদস্যদের নির্বাচিত করে। রাষ্ট্রপতিকেও নির্বাচিত করছে এই সংসদ। সেই রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিচ্ছেন প্রধান বিচারপতিকে। কাজেই উনি যদি একথা বলেন, তার নিয়োগ কোথায় যাবে? বঙ্গবন্ধু ’৭২-এর সংবিধানেই এই নারী সদস্য দিয়েছিলেন। এখন ৫০ জন সংরক্ষিত নারী সদস্য। সারাবিশ্বেও এখন নারীদের মর্যাদার কথা বলা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, মার্শাল ল’ অধ্যাদেশকে ইতোমধ্যে অবৈধ বলা হয়েছে। তাহলে আবার সেই মার্শাল ল’র মাধ্যমে সৃষ্ট সুপ্রিম জডিশিয়াল কাউন্সিলকে কীভাবে বৈধতা দেয়া হচ্ছে? আপিল বিভাগ সংবিধান সংশোধন করে দিতে পারে না, সেই ক্ষমতা কেউ তাকে দেয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদ চলে কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী। সংসদ কতদিন চলবে সেই সিদ্ধান্ত নেয় কার্যউপদেষ্টা কমিটি। সেখানে কেবিনেটের কোনো ভূমিকাই নেই। কাজেই এসব প্রশ্নের মাধ্যমে তিনি নিজেকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছেন। সংসদই সার্বভৌম, এই সংসদই সংবিধান রচনা করে এবং এই সংসদই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। যেই সংসদ আইন তৈরি করে দেয় সেখানে সেই সংসদকে খাটো করা, রাষ্ট্রপতিকে খাটো করা- সেটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এই রায় কারও কাছেই গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, এই রায়ে বিএনপি খুব খুশি। অথচ এই রায়েই জিয়ার ক্ষমতা দখলকে অবৈধ বলা হয়েছে। সেটা মনে হয় তারা দেখেননি। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল থাকাতেই তারা খুশি।