এসআই স্বামীর বন্ধুর প্ররোচনায় ‌‘মাদক ব্যবসায়’ স্ত্রী

এসআই স্বামীর বন্ধুর প্ররোচনায় ‌‘মাদক ব্যবসায়’ স্ত্রী

পুলিশের এসআই স্বামীর বন্ধুর প্ররোচনায় ইয়াবার চালান এনে গ্রেফতার হয়েছেন তাহমিনা আক্তার (২৫)। সঙ্গে মূল হোতা পলাশ চন্দ্র দাশ (৩১) ও তার স্ত্রী কুলসুমও গ্রেফতার হয়েছেন। পুলিশ বলছেন, তারা এর আগেও ইয়াবা এনেছে।

মঙ্গলবার ভোর রাতে রাজধানীর বনশ্রী এলাকার জি ব্লকের ৬নং রোডের ৮০/৩০নং বাসা থেকে ১০ হাজার ১০০ পিস ইয়াবাসহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, ঢাকা মেট্রো উপ-অঞ্চলের একটি বিশেষ টিম তাদেরকে গ্রেফতার করেছে। অভিযান পরিচালনা করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, ঢাকা মেট্রো উপ-অঞ্চলের উপ-পরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমা।

জানা গেছে, গ্রেফতার তাহমিনার স্বামীর নাম সালাহউদ্দিন। তিনি পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) টিএফআই সেলের উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদে ঢাকায় কর্মরত রয়েছেন। এসবি সদর দফতর সূত্রে এমন কর্মকর্তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ফরিদুপুর জেলার কোতয়ালী থানাধীন বিলনালিয়ার ধুল্দি গ্রামের প্রদীপ কুমার দাশের ছেলে পলাশ চন্দ্র দাশ। বেশ কয়েক বছর আগে প্রেম করে মুসলমান পরিবারের কুলসুমকে বিয়ে করেন তিনি।

মঙ্গলবার দুপুরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রো অঞ্চলের সহকারী পরিচালক (উত্তর) মোহাম্মদ খোরশিদ আলম বলেন, গোপন সংবাদে জানা যায়, আসামিরা দীর্ঘদিন যাবত কক্সবাজার হতে ইয়াবার চালান এনে খুচরা ও পাইকারিতে বিক্রি করে। তাদের ওপর গত ১৫ দিন মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের টিম নজরদারি করেছে। গোপন সংবাদে জানা যায়, মঙ্গলবার ভোরে একটি ইয়াবার চালান নিয়ে তারা ঢাকায় আসবে। এমন খবরে ডিএনসির টিম ঘটনাস্থলের আশপাশ এলাকায় অবস্থান নেয়।

তিনি বলেন, ভোর সাড়ে ৫টার দিকে একটি সিএনজি থেকে নেমে আসামিরা বনশ্রীর ওই বাসায় প্রবেশ করলে ডিএনসির টিমের সদস্যরা তাদের আটক করে বিধি মোতাবেক তল্লাশি চালায়। তল্লাশিকালে কুলসুমের পায়ে অ্যাংলেটের মাধ্যমে বিশেষভাবে লুকানো ১৬০০ পিস, তাহমিনার পায়েও একই কায়দায় লুকানো ১৬০০ পিস ও বাসা থেকে আরও ৬ হাজার ৯০০ পিস ইয়াবাসহ (সর্বমোট ১০ হাজার ১০০ পিস) তাদের আটক করা হয়।

তাহমিনা আক্তার প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তার স্বামী সালাহউদ্দিন পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) টিএফআই শাখায় উপ-পরিদর্শক পদে কর্মরত। এ বিষয়ে তথ্য যাচাই-বাচাই করা হচ্ছে বলে জানান মোহাম্মদ খোরশিদ আলম।

তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পলাশ চন্দ্র জানায়, দীর্ঘদিন থেকে সে এ ব্যবসায় জড়িত। একাধিকবার সে কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালান ঢাকায় নিয়ে আসে। তারই পরামর্শে পারস্পারিক যোগসাজশে এই ইয়াবার চালান আনতে কক্সবাজার যায় তাহমিনা ও কুলসুম।

এ ঘটনায় আটক তিনজনের বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৯০ এর সংশ্লিষ্ট ধারায় মোহাম্মদপুর সার্কেল পরিদর্শক সাজেদুল আলম বাদি হয়ে একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করেছেন। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের কাছে রিমাণ্ডের আবেদন করা হবে।

অভিযান পরিচালনাকারী টিমের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, স্বামীর সঙ্গে মিল না হওয়ায় তাহমিনা স্বামী সালাহউদ্দিনের স্কুল বন্ধু পলাশ চন্দ্রের বাড়ি যায়। সেখান থেকে পলাশের স্ত্রী কুলসুমের সঙ্গে কক্সবাজারে ঘুরতে যায়। ফেরার পথে পলাশ ফোন করে ইয়াবার চালান আনতে বলেন। এ জন্য মোটা অঙ্কের টাকার প্রলোভন দেখান তিনি। তাছাড়া স্বামী পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ায় কোনো সমস্যা হবে বলেও আশ্বস্ত করেন পলাশ।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, তাহমিনা এর আগেও ইয়াবার চালান এনেছেন বলে জানিয়েছে গ্রেফতার কুলসুম। আমরা সার্বিক বিষয় খোঁজ-খবর নিচ্ছি। তাহমিনার স্বামী এসবির ওই এসআই ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তবে এ ব্যাপারে কথা বলতে মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও রিসিভ করেননি তাহমিনার স্বামী এসআই সালাহউদ্দিন। বিকেলের পর থেকে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ