চীনের সঙ্গে সংঘাত মিটতে না মিটতেই পররাষ্ট্রনীতি প্রশ্নে ফের সঙ্কটে পড়েছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে যে তা না পারা যাচ্ছে হজম করতে, না পারা যাচ্ছে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে চাপমুক্ত হতে। এ নিয়ে বিভিন্ন স্তরের চাপ কাটিয়ে সমাধানের পথ খোঁজাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে চাপটাও বহুমাত্রিক। ভারতে বসবাসকারী ৪০ হাজার রোহিঙ্গাকে নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়েছে। দুশ্চিন্তার সবচেয়ে বড় কারণ, এই রোহিঙ্গা গোষ্ঠী জম্মু ও কাশ্মিরে ছড়িয়ে পড়ছে।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রের তথ্য অনুযায়ী রোহিঙ্গা জঙ্গি গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সঙ্গে সরাসরি যোগ রয়েছে লস্কর ই তইবা, জইশ- মুহাম্মদ এবং পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের। কাশ্মিরের টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের আধিক্য উপত্যকায় বাড়াটা একেবারেই কাম্য নয়।
বিনা জঙ্গি অনুপ্রবেশেই পাকিস্তান এই জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে কাশ্মিরে কলকাঠি নাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কিন্তু পরিস্থিতি এমনই যে তাদের মিয়ানমারে ফেরানো এখন কার্যত অসম্ভব। গতকালই জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার প্রধান জায়েদ রাদ আল হুসেন এই প্রসঙ্গে ভারতের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
জাতিসংঘে ভারতের প্রতিনিধি বুধবার ওই সমালোচনার জবাবে বলেন, ‘অন্য অনেক দেশের মতো ভারতও অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিশেষত সেই অনুপ্রবেশকারীরা যদি জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে কাঁটা হয়ে দাঁড়ান। মানবাধিকার সংস্থার প্রধানের বক্তব্যে আমরা বিস্মিত।’
কিন্তু এই সমালোচনা নিঃসন্দেহে দিল্লির অস্বস্তি বাড়িয়েছে। পাশাপাশি সন্ত্রাস প্রশ্নে আগাগোড়া ভারতের পাশে দাঁড়ানো বাংলাদেশ সরকারও ক্রমাগত চাপ বাড়াচ্ছে।
আনন্দবাজার পত্রিকার এক খবরে জানানো হয়েছে, দু’দিন আগেই নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোয়াজ্জেম আলি স্বরাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশে বসবাসকারী সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মিয়ানমারে ফেরানোর জন্য ভারতকে সক্রিয় হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
মোয়াজ্জেম বলেছেন, ‘মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে। আমরা সবাই বিমস্টেক গোষ্ঠীভুক্ত। ভারতের জোর দিয়ে মিয়ানমারকে বলা উচিত সে দেশে এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে যাতে এরা নিজেদের দেশে ফিরতে পারেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ভারতে থাকা শরণার্থীদেরই মিয়ানমারে ফেরানোর অবস্থায় নেই দিল্লি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ ব্যাপারে সে দেশের সরকারের পরামর্শদাতা ও ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে কথা বলেছেন।
কিন্তু রোহিঙ্গা প্রশ্নে এতটুকুও আপস করার জায়গায় নেই সু চি। বিশেষ করে আরসা জঙ্গিরা রাখাইন প্রদেশে ৩০টি পুলিশ চৌকি ও একটি সেনা ছাউনিতে আক্রমণ করার পরে পরিস্থিতি বেশ জটিল হয়ে উঠেছে।