পবিত্র ঈদুল আজহার বাকি মাত্র একদিন। ব্যস্ত নগরবাসী স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছে কদিন আগে থেকেই। সড়ক, রেলসহ সব পথে চলতি সপ্তাহের শুরু থেকেই ঘরমুখো যাত্রীদের ঢল নেমেছে। কিন্তু এতদিন যাত্রীদের চাপ কম থাকলেও সপ্তাহের শেষ দিন যাত্রীদের ঢল নেমেছে সদরঘাটে। যাত্রীদের ভিড়ে লঞ্চ টার্মিনাল যেন জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি। তাতে কি? বেরি আবহাওয়া উপেক্ষা করেও পুরোদিনই রাজধানীর সদরঘাট ও নৌযানে ছিল উপচেপড়া ভিড়। গন্তব্য যেখানেই হোক কোনো নৌযানই ফাঁকা যায়নি। প্রতিটি লঞ্চ যাত্রীতে ঠাসা অবস্থায় ছেড়ে যাচ্ছে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। স্রোতের মতো মানুষ সকাল থেকে ছুটছেন সদরঘাটের দিকে।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত প্রায় ৯০টি লঞ্চ বিভিন্ন গন্তব্যে রাজধানী ছেড়েছে। রাত পর্যন্ত যে সংখ্যা ১৫০ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটি কর্তৃপক্ষ।
বরিশাল, চাঁদপুর, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, বরগুনা, পিরোজপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলে ঘরমুখো মানুষের চাপ সামলাতে ঈদযাত্রায় ইতিমধ্যে স্পেশাল লঞ্চ সার্ভিস শুরু হয়েছে। এ সার্ভিসকে আরো নিরাপদ করতে সরকারের পক্ষ থেকে বেশকিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক (ট্রাফিক) জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘সকাল থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা যে যার মতো লঞ্চঘাটে আসছেন। যাত্রীর এত চাপ সকালেও বরিশাল রুটে লঞ্চ ছেড়ে গেছে। ইতিমধ্যে ৯০টিরও বেশি লঞ্চ রাজধানী ছেড়েছে। আজ যাত্রীদের যে অতিরিক্ত চাপ, তাতে আজ অন্তত ১৫০টি লঞ্চ ঢাকা ছাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘আজ গার্মেন্টসসহ বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান ছুটি হওয়ায় যাত্রীদের অতিরিক্ত ভিড় দেখা যাচ্ছে। কোনো লঞ্চেই যাতে অতিরিক্ত যাত্রী না নেয় সেজন্য নিয়মিত টিমের পাশাপাশি র্যাবের টহল টিম নিয়োগ করা হয়েছে।’
সদরঘাটে ঘরমুখো যাত্রীদের জনস্রোত
সরকারি ছুটি আগামীকাল থেকে। শেষ কর্মদিবসে বাড়িমুখী মানুষের চাপ বাড়তে থাকে সদরঘাটে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ এই ঈদে লঞ্চে ঢাকা ছাড়ছে। সাধারণত দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চগুলো সন্ধ্যায় সদরঘাট ছেড়ে যায়। তবে এখন নির্ধারিত কোনো সময় নেই। যাত্রী ভরলেই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে লঞ্চগুলো।
নির্ধারিত সময়ের অপেক্ষা করছে না লঞ্চগুলো। ঘাটে ভিড়ছে আর প্রতিযোগিতা করে যাত্রীরা লঞ্চে উঠছে। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর লঞ্চগুলো সময়ের আগেই ছেড়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সদরঘাট নৌ টার্মিনালে দক্ষিণবঙ্গের ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। টার্মিনালে প্রবেশ পথে টিকিট কাউন্টারে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন। পন্টুনগুলোতে যাত্রীদের জটলা। ক্ষণিক সময়ের মধ্যে লঞ্চযাত্রী বোঝাই হয়ে যাচ্ছে। তবে যত তাড়াতাড়ি যাত্রী বোঝাই করা হোক না কেন লঞ্চগুলো গ্যাংওয়ে ছাড়তে সময় নিচ্ছে। কারণ প্রতিটি লঞ্চের পিছনে লঞ্চের জটলা রয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে বার বার মাইকে বলা হচ্ছে, পন্টুন বা মূল টার্মিনালে ভিড় না করে যাত্রী ছাউনিতে বিশ্রাম নিতে।কিন্তু কে শোনে কার কথা। কেউ যাত্রী ছাউনিতে যাচ্ছেন না। দীর্ঘ সময় মূল টার্মিনালে দাঁড়িয়ে থাকছেন।
বিআইডব্লিউটিএ ও ঢাকা নদীবন্দর ট্রাফিকের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, বিগত দিনের তুলনায় আজ চাপ বেশি। বিকালে যাত্রীদের চাপ অনেক বেড়েছে। তবে যাত্রীদের সব সুযোগ সুবিধা দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। এদিকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল পরিদর্শন করেন পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক। তিনি এমভি ফারহান-৯ লঞ্চের যাত্রীদের সঙ্গে কুশলবিনিময় করেন।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল পরিদর্শন শেষে আইজিপি একেএম শহীদুল হক সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, লালবাগ পুলিশের ডিসি ইব্রাহিম খান, ঢাকা নদীবন্দর ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।