নারী ভক্তকে ধর্ষণে অভিযুক্ত ভারতের বিতর্কিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির আদালত। সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে হেরিকপ্টারযোগে হরিয়ানার রোহতক কারাগারে যান দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর (সিবিআই) বিশেষ আদালতের বিচারক জগদ্বীপ সিং। সেখানেই তিনি ওই রায় ঘোষণা করেন।
গত শুক্রবার একই বিচারকের আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন ভারতের প্রভাবশালী এই ধর্মগুরু। তার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর ভক্তদের দাঙ্গা ও সহিংসতার আশঙ্কায় রোহতকের সুনারিয়া কারাগারে বিশেষ অাদালত বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ডেরা সাচ্চা সওদার প্রধান রাম রহিম সিং ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর এই কারাগারেই বন্দি আছেন।
বহুল প্রতীক্ষিত এই মামলার রায় ঘোষণা করতে স্থানীয় সময় দুপুর দুইটা ১৬ মিনিটে সিবিআই’র বিচারপতি জগদ্বীপ সিং রোহতকের সুনারিয়া কারাগারে পৌঁছান। বার্তাসংস্থা এএনআই বলছে, রায় শুনতে দুপুর ১ টা ৫৬ মিনিটে কারাগারে পৌঁছান ধর্মগুরু রাম রহিমের আইনজীবী এসকে নরওয়ানা।
রায় ঘোষণার আগে হরিয়ানা পুলিশের কর্মকর্তা মোহাম্মদ অকিল এনডিটিভিকে বলেন, রোহতকে ডেরা সমর্থকদের কোনো জমায়েত হয়নি। রাম রহিমের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে হরিয়ানার রোহতকের কারাগারে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা দুর্গ গড়ে তোলা হয়।
রাজ্য পুলিশ সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, যে কোনো ধরনের সহিংসতার চেষ্টা হলে তারা গুলি ছুড়বেন। সেনাবাহিনীর একটি সূত্র বলছে, প্রয়োজনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হতে পারে। সেনাবাহিনীর সদস্যদেরকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তবে শুক্রবার ধর্মগুরু দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর হরিয়ানা, পাঞ্জাব, নয়াদিল্লিসহ ভারতের বিভিন্ন শহরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে রাম রহিমের ভক্তরা। গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও পুলিশের সঙ্গে প্রাণঘাতী সংঘর্ষে অন্তত ৩৮ জনের প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া সংঘর্ষে আহত হয় আরো আড়াই শতাধিক।
পঞ্চকুলায় শুক্রবার যে ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সেটি নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছে হরিয়ানা পুলিশ। ডেরা প্রধানের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে চলমান উত্তেজনার মাঝে হরিয়ানা ও পাঞ্জাবে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে হরিয়ানা এবং পাঞ্জাবে সেনাবাহিনী মোতায়েন ও কারফিউ জারি করা হলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এদিকে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও ইনটেলিজেন্স ব্যুরোর পরিচালক দিনেশ্বর শর্মাকে পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার পরিস্থিতি সার্বিক নজরদারির নির্দেশ দিয়েছেন।
৫০ বছর বয়সী স্বঘোষিত এই ধর্মগুরুর ভারত এবং ভারতের বাইরে অন্তত ৬ কোটি ভক্ত আছে। ২০০২ সালে দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীর কাছে এক তরুণী চিঠি লেখেন। চিঠিতে গুরু রাম রহিমের আস্তানায় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। ওই তরুণী চিঠিতে জানান, তার মতো আরো অনেক তরুণীই গুরুর প্রতি তরুণীর পরিবারের অন্ধ ভক্তির কারণে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
ওই চিঠির পর দেশটির কেন্দ্রীয তদন্ত ব্যুরোকে ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। তবে ধর্ষণের শিকার তরুণীর পরিচয় খুঁজে বের করতে কয়েক বছর লেগে যায়। তবে ২০০৭ সালে ওই তরুণী প্রকাশ্যে এসে গুরু রাম রহিমের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন।