কোরবানির ঈদের পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কুষ্টিয়ার প্রায় ৩০ হাজার খামারি। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই কমে যাচ্ছে গরুর দাম। সীমান্ত দিয়ে বৈধ ও অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণে ভারতীয় গরু আসায় বাজারে দাম পড়ছে। সীমান্তের ৩১ করিডোর খুলে দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ খামারিদের।
কুষ্টিয়ায় গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে গরুর দাম। খামারিদের অনেকেই শুধু এই কোরবানি ঈদে লাভের মুখ দেখার আশায় ছিলেন।
খামারিরা জানান, ঈদের আগ পর্যন্ত সীমান্ত এভাবে খোলা থাকলে তাদের পথে বসা ছাড়া আর অন্য কোনো উপায় থাকবে না। এ ছাড়া বন্যার কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলের খামারিদের অনেকেই বাধ্য হয়ে কম দামে গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন।
সেই সঙ্গে খামারিদের বিপদ বাড়িয়েছে সড়কের নাজুক অবস্থাও। যার কারণে, ঢাকা ও চট্টগ্রামের হাটে পশু পাঠাতে হিমশিম খাচ্ছেন খামারিরা। এ ছাড়া বেহাল সড়কের কারণে ট্রাক ঢাকায় আসতেই সময় লাগছে ১৫ ঘণ্টারও বেশি। ফলে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দুর্বল হয়ে পড়ছে পশুগুলো। পাশাপাশি রাস্তায় চাঁদা দিতে হয়। তাই এভাবে তাদের পক্ষে ঢাকা-চট্টগ্রামে গরু নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
এ কারণে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার দুই লাখ গরু-ছাগল ও ভেড়া নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কুষ্টিয়ার খামারিরা।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার খামারি মো. সরুজ আলী। একটি অ্যাগ্রোফুডের চাকরিজীবী এ ব্যক্তি নগদ টাকা ছাড়াও ব্যাংক থেকে দুইলাখ টাকা ঋণ নিয়ে স্ত্রী হাসিনা বেগমের সহায়তায় খামার চালাচ্ছেন। গত বছর গরুর ব্যবসায় লোকসান হয়েছে তার। এবার ভারত থেকে গরু আসার খবর শুনে ভেঙে পড়েছেন তিনি।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আইলচারা গ্রামের রফিকুল ইসলাম কোরবানির ঈদে বিক্রির আশায় ৫টি গরু পালন করেছেন। তিনি জানান, ঢাকার এক বেপারি এসে সেগুলোর মধ্যে দুটির দরদাম করে যান ৯ লাখ টাকা। কথা ছিল, ব্যাংকে টাকা লেনদেন হবে, কিন্তু ভারত থেকে গরু আসতে শুরু করায় সেই বেপারি ফোনে জানিয়েছেন, পরিস্থিতি দেখেশুনে গরু নেবেন তিনি। এ খবরে চরম দুশ্চিন্তায় আছেন রফিকুল।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কাজী ফার্মের মালিক কাজী শওকত জানান, কোরবানির জন্য গত প্রায় এক বছর ধরে তিনি পৌনে ২০০ গরু মোটাতাজা করেছেন। সম্প্রতি ভারত থেকে গরু আসায় দেশি গরুর চাহিদা কমেছে। গত সপ্তাহে ঢাকার এক বেপারী তার খামারের সাড়ে ১১০০ কেজি ওজনের একটি গরু দাম বলেছিলেন ৯ লাখ টাকা। শুক্রবার সকালে সেই একই গরু তিনি কুষ্টিয়ার এক কসাইয়ের কাছে মাত্র দুই লাখ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, গরু ব্যবসায়ীরা খামারে এসে যে দাম বলছেন তা ছয় মাস আগে কেনা দামের চেয়েও কম।
সরকারি হিসাব মতে, কোনবানির ঈদকে সামনে রেখে কুষ্টিয়ায় ২০ হাজার খামারে প্রস্তুত করা হয়েছে প্রায় দুই লাখ পশু। তবে বাস্তবে জেলায় খামারি এবং পশুর সংখ্যা এর থেকে অনেক বেশি। জেলার সবচেয়ে বড় খামার সদর উপজেলার কুমারগাড়ায় কাজী ফার্মে প্রস্তুত রয়েছে দেড়শ গরু। একই উপজেলার খাজানগর এলাকার দেশ এগ্রো ফার্মে লালন-পালন করা হচ্ছে প্রায় শতাধিক গরু ও ২২টি ছাগল।
এসব ফার্ম বাদে অনেক পরিবারও আলাদাভাবে গরু-ছাগল পালন করেছে। কোনো কোনো পরিবার ১৫টি পর্যন্তও গরু পালন করেছে। এসব গরুর বেশির ভাগই বড় আকারের।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. আসাদুল হক বলেন, খামারিরা আশঙ্কা করছেন, ভারত থেকে গরু এলে তারা দাম পাবেন না। তাই চরম দুঃশ্চিন্তায় আছেন তারা।
তিনি আরও বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে খামারিদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। দেশে যে পরিমাণ গরু-ছাগল আছে, তা দিয়েই কোরবানির পশুর চাহিদা মিটে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
কুষ্টিয়া জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় পশু মোটাতাজা করার জন্য ৬ উপজেলায় ২০ হাজার ৫৮৬টি খামার রয়েছে। এসব খামারে প্রায় ৯৩ হাজার গরু, ৬৬ হাজার ছাগল এবং ৩ হাজারের মতো ভেড়া আছে। সবেচেয়ে বেশি খামার এবং পশু রয়েছে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায়।