বাংলাদেশে গরু রফতানি বন্ধের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকেই ভারত থেকে অবৈধভাবে গরু পাচার কমে এসেছে ব্যাপকহারে। গত কয়েক বছরে ভারত থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে পাঠানো গরুর সংখ্যা এক চতুর্থাংশে নেমে এসেছে।
গত মঙ্গলবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু বিজনেস লাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
ঈদুল আজহার মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকলেও, ভারতের সীমান্ত দিয়ে গরু পাচার ব্যাপকহারে কমে যাওয়া, এর কারণ ও আর্থিক প্রভাবের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
দ্য হিন্দু বিজনেস লাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীমান্ত দিয়ে গরু পাচার বাণিজ্য বর্তমানে প্রায় ৭৫ ভাগ কমে এসেছে। আগে প্রতিবছর অন্তত ২০-২২ লাখ গরু পাচার হলেও এখন তা কমে এসেছে ৫ লাখে। এতে এ বাণিজ্য থেকে আগে যেখানে ভারত অন্তত ৯ হাজার কোটি রুপি আয় করতো, এখন তা কমে এসেছে ১ হাজার ৬০০ কোপি রুপিতে।
বাংলাদেশ-ভারতে যেসব সীমান্ত দিয়ে গরু পাচার হয় সেসব এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থা ও নজরদারির কারণে পাচার কমে এসেছে।
এতে বলা হয়, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বছরে অন্তত ৮৮ লাখ গরুর প্রয়োজন হয় বাংলাদেশে, যার প্রায় অর্ধেক চাহিদা মেটাত ভারত। কিন্তু বর্তমানে চাহিদার মাত্র এক চতুর্থাংশ গরু আসছে ভারত থেকে।
বাংলাদেশ পাচার করা অধিকাংশ গরু আসে সাধারণত হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ ও রাজস্থান থেকে। গরু পাচারের অন্যতম স্থান কলকাতা থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে ২৪ পরগণার অ্যাংরাইল সীমান্ত, যেখান দিয়ে প্রতিদিন আগে ৫ হাজার গরু পাচার করা হতো। এ স্থানের ইছামতি নদী দিয়ে পাচার হতো গরু। আগে ঈদের সময়ে এ রুট দিয়ে প্রতিদিন ৫ হাজার গরু পাচার করা হলেও এখন এ সংখ্যা নেমে এসেছে ৫০০-তে।
এ রুট দিয়ে নিয়মিত গরু পাচারকারীদের একজন গোপাল বোস (৩০)। আগে তিনি ঈদের আগের এ সময়টাতে গরু পাচার নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকতেন। কিন্তু এখন সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। বিএসএফ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারিতে ইছামতি দিয়ে তার গরু পাচার বন্ধ হয়ে গেছে।
সাউথ বেঙ্গল বিএসএফের আইজি অঞ্জনয়েলু বলেন, মহাসড়কে নজরদারি বৃদ্ধির কারণে গরু পাচার অনেকটাই কমে গেছে। তারা এজন্য স্থানীয়দের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন।
এদিকে, ভারতের গরু পাচার বন্ধে ভারতীয় উদ্যোগে সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশে। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ সীমান্তে বিধি-নিষেধ ও কড়াকড়ি আরোপের ফলে গরু পাচার কমে গেছে।
দেশীয় খামারিদের গরু পালনে উদ্বুদ্ধ ও আর্থিকভাবে লাভবান করতে ভারতের উদ্যোগের এ সুযোগ নিয়েছে বাংলাদেশ।