আবারও দলে দলে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসছে রোহিঙ্গারা। চলতি মাসে রাখাইন প্রদেশে সেনা মোতায়েন করার পর থেকেই ওই এলাকা থেকে পালাচ্ছে রোহিঙ্গা মুসলিমরা। খবর আল জাজিরার।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নেতা আবদুল খালেক বুধবার এএফপিকে জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহে কমপক্ষে ৩ হাজার ৫শ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমারকে বিভক্ত করা নাফ নদীর কাছাকাছি কক্সবাজার এলাকায় ইতোমধ্যেই শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে অতিরিক্ত লোকজনে গাদাগাদি করে থাকছে। সেখানে আরো রোহিঙ্গারা এসে আশ্রয় নিচ্ছে ফলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী এবং উপকূলরক্ষী বাহিনী ওই এলাকায় টহল দেয়ার পরেও রোহিঙ্গারা দেশটিতে প্রবেশ করছে। সীমান্তরক্ষী এবং উপকূলরক্ষী বাহিনী বলছে, তারা চলতি সপ্তাহে শিশুসহ ৩১ রোহিঙ্গা বহনকারী একটি নৌকা ফিরিয়ে দিয়েছে।
শুধুমাত্র বালুখালি ক্যাম্পেই আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৩ হাজার রোহিঙ্গা। তারা রাখাইনে নিজেদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে এসেছে। ওই ক্যাম্পটি নদীর কাছাকাছি হওয়ায় রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের পর প্রথমে সেখানেই আশ্রয় নিচ্ছে।
অন্য একটি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন কামাল হোসেইন নামের এক রোহিঙ্গা। তিনি জানিয়েছেন, গত ১১ দিনে প্রায় ৭শ রোহিঙ্গা পরিবার বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। অনেকেই খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে কারণ ক্যাম্পে থাকার মতো আর কোনো জায়গা নেই।
চলতি মাসের ১২ তারিখে নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা বলে রাখাইনে কয়েকশ সেনা মোতায়েন করেছে মিয়ানমার সরকার। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ। এর আগেও মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনের রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে।
সেনাবাহিনীর ওপর হত্যা, গণধর্ষণ, আগুন দিয়ে ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার অভিয়োগ এনেছিল রোহিঙ্গারা। নতুন করে আবারও ওই এলাকায় সেনা মোতায়েনকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
গত অক্টোবরে পুলিশ চেক পোস্টে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাখাইনে দমন-পীড়ন শুরু করে সেনাবাহিনী। মিয়ানমার সরকার ওই অঞ্চলে জাতিগত নিধন চালিয়ে থাকতে পারে বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ।
চলতি মাসের ১৩ তারিখে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিলেন দ্বীন মোহাম্মদ নামের এক রোহিঙ্গা মুসলিম। তিনি জানিয়েছেন, সেনাদের কাছ থেকে অনুমতি ছাড়া রাখাইনের রোহিঙ্গা মুসলিমরা তাদের প্রতিবেশিদের বাড়িতেও যেতে পারছে না। এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে যেতে গেলেও সেনাদের অনুমতি লাগছে।
৪৫ বছর বয়সী এই কৃষক জানান, অন্য গ্রামে প্রবেশ করার অপরাধে তার ২৩ বছর বয়সী ছেলেকে সেনারা হত্যা করার পর তিনি তার পরিবারকে নিয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছেন।