মুসলিমদের মৌখিক তিন তালাককে অসাংবিধানিক বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। তিন তালাক নিষিদ্ধের আবেদন জানিয়ে করা ভারতীয় তালাকপ্রাপ্ত সাতজন নারীর দায়ের করা পিটিশনের রায়ে মঙ্গলবার দেশটির সুপ্রিম কোর্ট এ মন্তব্য করেন।
প্রধান বিচারপতি জেএস খেহারের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এক পিটিশনের শুনানি শেষে আগামী ছয় মাসের জন্য তিন তালাক স্থগিতের আদেশ দিয়েছেন। বিভিন্ন মতাদর্শের পাঁচ সদস্যের বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে গত ১২ থেকে ১৮ মে দীর্ঘ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, তিন তালাক স্থগিতের পক্ষে তিনজন ও বিপক্ষে দুইজন বিচারপতি মতামত দিয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা মুসলিমদের তিন তালাকের এই বিধানকে বাজে, অনৈতিক এবং অসাংবিধানিক বলে মন্তব্য করেন। তারা বলেন, তিন তালাকের এই বিধান কোরআন এবং শরীয়তের বিধি-বিধানের পরিপন্থী। ঐতিহাসিক রায়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতির বেঞ্চ তিন তালাকের বিধানকে ‘খারাপ আইন’ বলে উল্লেখ করেন।
মুসলিমদের মৌখিক তিন তালাক স্থগিতে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায়কে ‘ঐতিহাসিক রায়’ বলছেন দেশটির নারীরা। ১৪ শ’ বছর আগের ইসলামিক এই বিধান স্থগিতের রায় আসার পর ভারতের বিভিন্ন স্থানে নারীরা মিষ্টি বিতরণ করছেন বলে হিন্দুস্তান টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।
তিন তালাকের বৈধতার বিরুদ্ধে পিটিশন দায়ের করেছিলেন শায়রা বানু নামে তালাকপ্রাপ্ত এক নারী। ৩৬ বছর বয়সী এই নারী আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বিতর্কিত একটি বিষয়ের অবসান ঘটলো সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের মাধ্যমে। একই সঙ্গে আদালতের এ রায় শিগগিরই কার্যকরের আহ্বান জানান তিনি। বার্তাসংস্থা এএনআই’কে শায়রা বানু বলেন, ‘আমি আদালতের এ রায়কে স্বাগত এবং সমর্থন জানাই। মুসলিম নারীদের জন্য আজ ঐতিহাসিক দিন।’
আদালতের বিচারকরা রায় ঘোষণার সময় বলেন, প্রতিবেশি বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ বিশ্বের ২০টিরও বেশি দেশে মৌখিক তিন তালাক নিষিদ্ধ। কেন্দ্রীয় সরকার মুসলমানদের ঐতিহাসিক তিন তালাকের ব্যাপারে আইন না করা পর্যন্ত তা স্থগিত থাকবে। স্ত্রীকে তালাক দেয়ার এই প্রক্রিয়া বিধিবহির্ভূত এবং ইসলামি রীতিনীতির বিরোধী।
বিচারকরা বলেন, আমরা প্রত্যাশা করছি, আইন প্রণেতারা আইন তৈরির সময় ‘মুসলিম পারিবারিক আইন’র (মুসলিম পারসোনাল ল) ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। এবিষয়ে সব রাজনৈতিক দল তাদের মতামত দেবেন।
ভিন্ন মতাদর্শের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে ছিলেন প্রধান বিচারপতি জগদিশ সিং খেহার, কুরিয়ান জোসেফ, রহিন্তন ফালি নরিম্যান, উমেশ ললিত ও আবদুল নাজির। আদালতের বিচারকরা প্রশ্ন করে বলেন, তিন তালাক ইসলামের মৌলিক কোনো বিধান অথবা কার্যকর করার মতো মৌলিক অধিকারের বিষয় কি না?
এসময় অল ইন্ডিয়া মুসলিম পারসোনাল ল বোর্ড যুক্তি দিয়ে বলে, তিন তালাকের বিষয়টি ভয়ঙ্কর, কলুষিত ও আপত্তিকর। এটির সঙ্গে কোরআন ও শরীয়তের কোনো অনুমোদন নেই।
এদিকে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের এ রায়ের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে দেশটির সরকার। সরকার পিটিশন দায়েরকারী নারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলছে, তিন তালাকের বিধান অসাংবিধানিক। নারীদের জন্য অপমানজনক ও বৈষম্যমূলক।