বিএনপি’র তিন দিনের টানা হরতাল ও আরও হরতালের হুমকিসহ কোনো আন্দোলনকে গুরুত্ব দিচ্ছে না সরকার ও আওয়ামী লীগ। তবে ইলিয়াস আলীর ‘নিখোঁজ’ হওয়ার বিষয়টি সরকার ও দলের সব মহলে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। কোনো একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতার এভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া দেশের সার্বিক রাজনীতির জন্য অশুভ সংকেত বলে মনে করছেন তারা। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিরোধী দলীয় হরতাল মোকাবেলা করার চেয়ে ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের করতে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করাই জরুরি বলে মনে করছেন তারা। বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেও নিয়েছে সরকার।
কেউ কেউ এ ব্যাপারে বিরোধীদলের সহযোগিতাও চেয়েছেন। তবে ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য সরকারের কাছে এখনো পর্যন্ত নেই বলেই জানালেন সংশ্লিষ্টরা।
একাধিক নেতা বলেছেন, বিরোধী দল যেহেতু মনে করছে সরকারের কোনো বাহিনী ইলিয়াস আলীকে তুলে নিয়ে গেছে সেক্ষেত্রে আরও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য তাদের কাছে থাকলে তা সরকারকে দিতে পারে। যা ইলিয়ার আলীকে খুঁজে বের করতে সহায়তা করবে।
একাধিক নেতা এও বলেছেন, হরতালের মতো যে সহিংস পথে বিরোধী দল গেছে তাতে শুধু সংঘাত ও প্রাণহানিই বাড়ছে। বাস্তবতা হচ্ছে, ইলিয়াস আলীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
তারা বলেন, হরতাল ঘোষণার কারণে সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি বড় অংশ সেখানে ন্যস্ত করতে হচ্ছে যা ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের করার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে।
বিরোধী দলের টানা হরতালের পর স্রেফ সরকারবিরোধী আন্দোলনের ইস্যু হিসেবে ইলিয়াস আলীকে ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এমনও মন্তব্য করেছেন একাধিক নেতা। তারা বলছেন বিরোধী দলের উদ্দেশ্য ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের করা নাকি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা সেটা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে একজন উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতার এমনভাবে নিখোঁজ হওয়ায় সরকার বেকায়দায় রয়েছে বলেও স্বীকার করে নিয়েছেন কেউ কেউ।
সরকারের সব মেকানিজমই বিষয়টির একটি সুষ্ঠু সুরাহা পেতে তৎপর রয়েছে জানিয়ে তারা বলেন, বিরোধী দলের সহযোগিতা পেলেই তা দ্রুততার সঙ্গে করা সম্ভব।
একাধিক নেতা অবশ্য বিরোধী দলের এই আন্দোলনকেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানোর কৌশল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যে সুর শোনা গেছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠেও।
কাতারে ৪ দিনের সরকারি সফর শেষে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রী দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, বিরোধী দলের এই আন্দোলনও যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকানোর পাঁয়তারা।
মঙ্গলবার সকালে দেশে ফিরে সন্ধ্যায় সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে দলের নেতাদের কাছ থেকে অবহিত হন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকানোর বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ইলিয়াস আলীকে বের করতে সরকারকে সময় না দিয়েই বিরোধীদল হরতালে নেমেছে।
বিষয়টি নিয়ে যাদের সঙ্গে কথা হয় তাদের মধ্যে রয়েছেন- আওয়ামী লীগের দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুব-উল আলম হানিফ প্রমুখ।