মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. হেলালউদ্দিনকে জেরা শুরু করেছেন আসামিপক্ষ।
বুধবার দুপুর পৌনে ৩টা থেকে সাঈদীর উপস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে-১ তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা করছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম।
এর আগে বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনালে জেরা ৭ মে পর্যন্ত মুলতবির আবেদন জানান মিজানুল ইসলাম। তিনি তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য তদন্ত ও প্রতিবেদনের নথিপত্র পর্যালোচনার জন্য সময় প্রয়োজন বলে দাবি করে এ আবেদন করেন। টাইব্যুনাল আবেদন খারিজ করে দিয়ে জেরা শুরুর নির্দেশ দেন।
গত ৮ এপ্রিল থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত টানা ৯ কার্যদিবসে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন তদন্ত কর্মকর্তা হেলালউদ্দিন।
৯ দিনের সাক্ষ্যে তিনি ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে না পারা রাষ্ট্রপক্ষের ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী, তদন্তকালে জব্দ করা বিভিন্ন আলামত, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এবং সাঈদীর যুদ্ধাপরাধের তথ্য-প্রমাণ সম্বলিত বিভিন্ন বই, সিডি-ভিডিও, নথিপত্র, সংবাদপত্র ইত্যাদি উপস্থাপন করেন।
সাক্ষ্য দানকালে হেলালউদ্দিন জানান, ‘জেনোসাইড বাংলাদেশ’ নামের একটি ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, বরিশালসহ ঝালকাঠি, রাজাপুর, কাউখালী, স্বরূপকাঠি, কাঠালিয়া, পিরোজপুর, মঠবাড়িয়া ও বাবুগঞ্জ এলাকার ৬০ শতাংশ বাড়িঘর মুক্তিযুদ্ধকালে ধ্বংস হয়ে গেছে। এসব এলাকায় বধ্যভূমি ও গণকবরের সংখ্যা ৪৭টি। তিন হাজার ৪০০ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, আড়াই হাজার কঙ্কাল পাওয়া গেছে। ৬৫ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তা জানান, এসব ঘটনার অনেকগুলো সাঈদীর দ্বারা বা তার নেতৃত্বে সংঘটনের সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। পিরোজপুরের ১৮ জন রাজাকারের তালিকার ১৬ নম্বরে সাঈদীর নাম আছে।
উল্লেখ্য, এ মামলায় এ পর্যন্ত ২৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৪৬ জন সাক্ষীর মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া ১৫ জনের লিখিত জবানবন্দীকে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীর দায়ের করা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে তার রাজধানীর শাহীনবাগের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এর পর ওই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
শুনানি শেষে তার বিরুদ্ধে গত বছরের ১৪ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষের আনা অভিযোগ আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল। ৩ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়। গত ২০ ও ২১ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) পাঠ শেষে ৭ ডিসেম্বর থেকে সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছেন মামলার সাক্ষীরা।
এর মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে প্রথম অভিযুক্ত হিসেবে সাঈদীর আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
সাঈদীর বিরুদ্ধে গঠন করা অভিযোগ এবং ৭৭ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন ও আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিন হাজারেরও বেশি নিরস্ত্র ব্যক্তিকে হত্যা বা হত্যায় সহযোগিতা, নয়জনেরও বেশি নারীকে ধর্ষণ, বিভিন্ন বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট, ভাঙচুর এবং ১০০ থেকে ১৫০ হিন্দুকে ধর্মান্তরে বাধ্য করার অভিযোগ আনা হয়েছে।