প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সাধারণ জীবনযাপনের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ধানমন্ডির ওই ছোট্ট বাড়িটা যেটা এখন আমরা বঙ্গবন্ধু মিউজিয়াম করেছি, আপনারা যারা যাননি গিয়ে দেখে আসবেন কেমন সাদাসিধেভাবে বঙ্গবন্ধু জীবনযাপন করতেন। তিনি তো একটা দেশের রাষ্ট্রপতি, তিনি তো এই দেশটাকে স্বাধীন করেছেন। এখন হয়ত অনেকেই বিশ্বাস করবেন না, কীভাবে একটা দেশের সরকারপ্রধান বসবাস করতেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতাকে বিনা গোসল ও জানাজায় সৈনিকদের দাফনের চেষ্টার মর্মান্তিক বর্ণনা দেন। যা কারফিউ চলাবস্থাতেও স্থানীয়দের বাঁধাতে সৈনিকরা করতে ব্যর্থ হয়। রিলিফের কাপড়ের পাড় ছিঁড়ে সেই পাড় দিয়ে সেদিন দাফন হয়েছিল হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০১৪ সালের নির্বাচনে আবার আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে ক্ষমতায় ফিরে এলো এবং আজকে ৮ বছরের রাষ্ট্র পরিচালনায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার পথে।
স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে বেঁচে থাকা যে কতবড় কষ্ট তা একমাত্র যারা স্বজন হারিয়েছেন তারাই কেবল বুঝতে পারবেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারপরও যে কাজ করে যাচ্ছি দেশের জন্য সেখানে প্রতি মুহূর্তেই একটা কথাই শুধু মনে করি- সেটা হলো এই দেশের মানুষের জন্যইতো আমার বাবা সারাজীবন জেল, জুলুম, অত্যাচার সহ্য করেছেন। আর এদেশের মানুষের জন্যই আমার বাবা, মা, ভাইয়েরা জীবন দিয়ে গেছেন। কাজেই জীবনে আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই, একটাই আছে। আমার বাবার অসমাপ্ত কাজগুলো যদি আমি করে যেতে পারি।
শেখ হাসিনা বলেন, কেউ কেউ খুনিদের দিয়ে দল গঠন করিয়েছে। ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন খুনি হুদা এবং শাহরিয়ার- এদেরকে দিয়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে। ইত্তেফাকে বসে মঈনুল হোসেন খুনিদের দিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন করিয়েছিল। জিয়াউর রহমান এদের কাউকে প্রধানমন্ত্রী, কাউকে মন্ত্রী, উপদেষ্টা করেছিল। জেনারেল এরশাদ ওই খুনি রশিদ-ফারুককে দিয়ে ফ্রিডম পার্টি তৈরি করে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করেছিল। আর খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন করে ওই খুনি রশিদ আর মেজর হুদাকে সংসদ সদস্য করে বিরোধী দলের চেয়ারে বসিয়েছিল। এই খুনিরাই এসব রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতার সাথী হয়েছিল।
শেখ হাসিনা দেশের তথাকথিত বুদ্ধিজীবী মহলের সমালোচনা করে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যখন একটু সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে, একটু আশার আলো দেখে এবং যারা এই মানুষের জন্য কাজ করে তাদের ওপরই যেন অশুভ শক্তি আঘাত হানতে চায়। নিজেরা নিজেদের জ্ঞানী, বুদ্ধিমান, বুদ্ধিজীবী অনেক কিছুই ভাবেন আর কাজের সময় যতধরনের অপকর্মকে তারা প্রশ্রয় দেন এবং উৎসাহিত করেন। কিন্তু কেন? প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, এদেশের মানুষের কি বেঁচে থাকার, একটু ভালো থাকার অধিকার নেই? তাদের নিজেদের জীবনমান উন্নত করার অধিকার নেই? তারা কি একটু সুন্দরভাবেও বাঁচতে পারবে না?
বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী ও মোহাম্মদ নাসিম।
আরও বক্তৃতা করেন অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং সংস্কৃতি বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, সাংবাদিক কলামিস্ট আবেদ খান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সিমিন হোসেন রিমি।
কবিতা আবৃত্তি করেন সংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। ছড়া পাঠ করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সভায় প্রারম্ভিক বক্তৃতা করেন। আলোচনা সভার প্রারম্ভে ১৫ আগস্ট এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।