আইএমএফের পূর্বাভাষ: আগামী অর্থবছরে জিডিপি ৫.৫ প্রবৃদ্ধি ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক এই দাতা সংস্থা। আর সরকারকে এ জন্য প্রবৃদ্ধিবান্ধব ব্যবসায়িক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
বুধবার সকালে আইএমএফ ঢাকা কার্যালয় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সফররত আইএমএফের মিশন প্রধান ডেভিড কোয়েন জিডিপির এই পূর্বানুমানের কথা তুলে ধরেন। গত ১২ এপ্রিল আইএমএফ বোর্ড সভায় বাংলাদেশকে দেওয়া প্রায় ১০০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এই মত বিনিময়ের আয়োজন করা হয়। এসময় বাংলাদেশে আইএমএফের আবাসিক প্রধান ইতেরি কিনত্রাজে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড সভায় সম্প্রতি নয়টি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক হয়েছে কি না জানতে চাইলে আইএমএফ কোনো মন্তব্য করেনি। তবে বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংককে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া ব্যাংকগুলোসহ নতুন অনুমোদিত ব্যাংকগুলোর তারল্য নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য ব্যাংকগুলোর ওপর তদারকি বাড়াতে হবে।
ডেভিট কোয়েন বলেন, প্রবৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নে বাংলাদেশে সরকারি, বেসরকারি ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে সমাজের সৃবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য সামজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাড়াতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারকে জ্বালানি মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে সঙ্গে মিলিয়ে সমন্বয় করতে হবে। তবে এর জন্য যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের বিষয়ে সরকারকে ভাবতে হবে।’
কোয়েন বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে সরকারের ঋণ বেশি হওয়ায় আমরা বিস্মিত। আশা করি, নতুন অর্থ বছরে সেটি নিয়ন্ত্রণ হবে। সরকারের অতিরিক্ত ঋণ বেসরকারি খাতকে বাধাগ্রস্ত করে। মূল্যস্ফীতি বাড়ায়। তাই সরকারকে সাশ্রয়ী হতে হবে।’
এসময় কোয়েন দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি, তাদের বর্ধিত ঋণ সুবিধার আওতায় দেওয়ার ঋণের শর্ত, ব্যবহার ক্ষেত্রে, বাংলাদেশের রাজস্ব আদায়, প্রবৃদ্ধিসহ নান অর্থনৈতিক সূচক নিয়ে কথা বলেন।
তিনি বলেন, আইএমএফের বর্ধিত ঋণের সুবিধায় যেসব দেশ সহায়তা পায় তাদের মধ্যে বাংলাদেশে রাজস্ব আদায় সবচেয়ে কম। এটা বাড়াতে হবে। আশা করি, অনুমোদিত ঋণের ব্যবহার করে বাংলাদেশ বাজেট নীতি, মুদ্রানীতি, আর্থিক খাতের সংস্কার এবং ব্যবসা ও বিনিয়োগ ক্ষেত্রে সংস্কার করবে। সরকার এই ঋণের সঠিক ব্যবহার কবরে বলেও জানান তিনি।
এসময় তিনি ব্যাংকিং খাত বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা জোরদার করার পরামর্শ দেন।
আইএমএফ বলছে, ‘ঘোষিত এই ঋণ অন্য দাতাদের উৎসাহ দেবে। এতে করে বাংলাদেশ সুবিধা পাবে। সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে বাংলাদেশের যে প্রবৃদ্ধি তাতে আগামী দিনে বাংলাদেশ ভারত ও চীন হবে।’
বাংলাদেশকে গত ১২ এপ্রিল ৯৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার সুদবিহীন ঋণ অনুমোদন করেছে আইএমএফ। ১০ বছরের জন্য এই ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক চাপ কাটাতে আইএমএফের বর্ধিত ঋণ প্রকল্পের আওতায় সংস্থাটি এই ঋণের অনুমোদন দিয়েছে।’
অনুমোদিত এই ঋণের অর্থ নিজের প্রয়োজন মতো ব্যবহার করতে পারবে। অবকাঠামো উন্নয়ন, অর্থনৈতিক চাপ মোকাবেলা করে স্থিতিশীলতা আনয়ন, বাজেট বাস্তবায়ন, মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন, ষষ্ট পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনাসহ সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ অর্থ ব্যবহার করা যাবে।
আইএমএফ মিশন প্রধান আরও জানান, প্রতি কিস্তিতে ১৪ কোটি ১০ লাখ ডলার করে মোট কিস্তিতে তিন বছর ধরে এ ঋণ দেওয়া হবে। ঋণের গ্রেস পিরিয়ড থাকছে সাড়ে ৫ বছর। পরবর্তী সাড়ে চার বছরে তা পরিশোধ করতে হবে।
‘অনুমোদিত এই ঋণের জন্য আমাদের ১৮ মাস আলোচনা করতে হয়েছে। তারপর আইএমএফ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আইএমএফের বর্ধিত ঋণের আওতায় এটি সবচেয়ে বড় ঋণ যা ২৪ সদস্যের বোর্ড সভায় সর্বসম্মিতি ক্রমে অনুমোদিত হয়েছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বিমত
এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর সচিবালয়ের মহাব্যবস্থাপক এএফএম আসাদুজ্জামান জানান, জিডিপি নিয়ে আইএমএফ যে পূর্বানুমান করেছে তার সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একমত নয়।
তিনি জানান, দেশের সার্বিক অর্থনীতি, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান তথ্য-উপাত্ত, বিগত তিন বছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধি, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগসহ সার্বিক দিক বিবেচনায় আসছে অর্থবছরে জিডিপির হবে ৭ শতাংশের কাছাকাছি।