ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে গতকাল শনিবার সকালে মুক্তামণির অস্ত্রোপচার করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল টিমের সদসদ্যরা। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে মুক্তার অস্ত্রোপচারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দৃশ্য ভিডিওতে ধারণ করা হয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, অতীতে বার্ন ইউনিটে রোগীর অস্ত্রোপচারকালে শখের বশে চিকিৎসকদের কেউ হয়তো মোবাইল ফোনে কিংবা ট্যাবে অস্ত্রোপচারের দুই-চার মিনিটের দৃশ্য ধারণ করে রাখতেন। কিন্তু আজ মুক্তামণির অস্ত্রোপচারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অস্ত্রোপচারের দৃশ্য পেশাদার একজন ভিডিওগ্রাফারকে দিয়ে ভিডিও করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্ন ইউনিটের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, মুক্তামণির অস্ত্রোপচার সফল ও ছোট এই শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠলে তা বার্ন ইউনিট তথা বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিরাট সফলতা হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্থান পাবে। এ কারণেই তারা অস্ত্রোপচারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব দৃশ্য পেশাদার ভিডিওগ্রাফার দিয়ে ধারণ করা হয়েছে।
এ ছাড়াও অস্ত্রোপচারে অংশগ্রহণকারী চিকিৎসকরা পরবর্তী সময়ে ফলোআপ অস্ত্রোপচারেরর সময় ভিডিওতে পূর্ববর্তী অস্ত্রোপচারের খুঁটিনাটি দেখে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করতে পারবেন।
শনিবার সকালে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের দ্বিতীয় তলার অপরাশেন থিয়েটারে মুক্তার অস্ত্রোপচার হয়। বার্ন ইউনিটের ৩ তলায় অপারেশন শেষে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ বার্ন ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক আবুল কালাম বলেন, অপারেশন থেকে পোস্ট অপারেটিভ (অপারেশন পরবর্তী) অবস্থা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাকে ৫-৬ সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করা হবে। অপারেশনের পর তার রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এটি মুক্তার প্রথম অপারেশন ছিল, তার আরও বেশ কয়েকটি অপারেশন লাগবে। প্রতি সপ্তাহে একটা করে অপারেশন করা হবে। আপাতত তার হাতের টিউমারের সবটুকু মাংস কাটা হয়েছে। বুক ও ঘাড়ে এখনও রোগটি আছে। সেগুলো আস্তে আস্তে চিকিৎসা করা হবে।
মুক্তাকে ঝুঁকিমুক্ত কখনোই বলা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে আজকের অপারেশনের কারণে ঝুঁকি আগের থেকে অনেকটা কমে গেছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিরল চর্মরোগে আক্রান্ত সাতক্ষীরার শিশু মুক্তাকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। গত ৯ জুলাই জাগো নিউজে ‘লুকিয়ে রাখতে হয় মুক্তাকে’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর মুক্তার চিকিৎসা দেয়ার দায়িত্ব নেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তার যাবতীয় চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব নেন।